ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে বহু মুসলিম: এইচআরডব্লিউ

বৃহস্পতিবার , ২৪ জুলাই, ২০২৫ ৮:১৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, সম্প্রতি ভারত সরকার আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই শত শত বাঙালি মুসলিমকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।
বুধবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ অভিযোগ তোলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেককে 'অবৈধ অভিবাসী' হিসেবে চিহ্নিত করে সীমান্ত পেরিয়ে ঠেলে দেওয়া হলেও, এদের অধিকাংশই ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা এবং ভারতীয় নাগরিক।
এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে বিজেপি সরকার এ ধরনের বিতাড়ন কার্যক্রম জোরদার করে। সরকার বলছে, এটি অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে, তবে সংস্থাটির মতে, এই কর্মকাণ্ড বৈষম্যমূলক এবং আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের শামিল।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, “বিজেপি সরকার নির্বিচারে এমনকি ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদেরও জোরপূর্বক বিতাড়িত করছে। তারা আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না।”
গত জুনে সংস্থাটি ১৮ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে, যাঁদের মধ্যে ছিলেন জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো ও পরে ফিরে আসা ব্যক্তি, এবং এখনও নিখোঁজ থাকা কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা। এসব তথ্য সংকলন করে গত ৮ জুলাই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে, যদিও সেখান থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) জানিয়েছে, ৭ মে থেকে ১৫ জুনের মধ্যে ভারত থেকে প্রায় ১,৫০০ মুসলিম পুরুষ, নারী ও শিশুকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে আনুমানিক ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী।
এইচআরডব্লিউ বলছে, বিজেপি শাসিত আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওড়িশা ও রাজস্থানে দরিদ্র মুসলিম শ্রমিকদের টার্গেট করে আটক করা হচ্ছে। এমনকি নাগরিকত্ব যাচাই ছাড়াই অনেককে সীমান্তে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আসামের প্রাক্তন শিক্ষক খায়রুল ইসলাম (৫১) জানান, গত ২৬ মে বিএসএফ সদস্যরা তাঁকে মারধর করে এবং জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। তাঁর ভাষায়, “আমি বাধা দিলে আমার মুখ চেপে ধরা হয়, হাত বাঁধা হয় এবং চারবার রাবার বুলেট ছোড়া হয় আকাশে। দুই সপ্তাহ পর আমি ফিরে আসতে পারি।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এমন জোরপূর্বক ‘পুশ-আউট’ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। সংস্থাটি ভারত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন যেকোনো বিতাড়নের আগে আইনি সুরক্ষা, যথাযথ তদন্ত, আইনজীবীর সহায়তা এবং আপিলের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।
১১৫ বার পড়া হয়েছে