প্রথম আলোর গোলটেবিল: ভয়ভীতি ও বিচারব্যবস্থার অস্থিরতা নিয়ে সারা হোসেনের উদ্বেগ

বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫ ১২:০৬ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের বিচারব্যবস্থার ভেতরে ভয় ও অস্থিরতার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন। উপস্থিত ছিলেন লেখক, গবেষক, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সারা হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে এখন কোনো ভয়ভীতি নেই, এমনটা কেউ বলতে পারবেন না। ভয় বিচারব্যবস্থার ভেতরেও রয়েছে, বাইরেও। বিচারপতিদের জন্য চিন্তার বিষয় হচ্ছে, আমি কী করলে, কে আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে। কোনও গোষ্ঠী তো জোরে আওয়াজ তুললেই শেষ। তখন বিচারপতির ভবিষ্যৎ সংকুচিত হয়ে যায়। এ পরিবেশে সঠিক রায় দেওয়া কি সম্ভব?”
তিনি আরও যোগ করেন, “গত এক বছরে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা হলেও কাঠামোতে কোনও পরিবর্তন আসেনি। প্রাথমিক পরিবর্তনগুলোও কি যথাযথ ছিল, এ নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। হাইকোর্টের বিচারকদের সরিয়ে নেওয়া কেন হলো, তার কারণ এখনো অজানা। এ বিষয়গুলো নিয়ে মিডিয়া বা জনমতও বেশি কিছু বলছে না।”
গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশব্যাপী ঢালাও মামলার প্রসঙ্গ টেনে সারা হোসেন বলেন, “লাখ লাখ নাম দিয়ে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এসব ঠিক কি, তা স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মামলাগুলো জনগণের, কিন্তু আসলে নিরপরাধ মানুষ দীর্ঘ সময় জেলে থাকছেন, তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিচয় ভিত্তিক বিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।”
জুলাই-আগস্টের মামলায় জামিনের বিষয়েও তিনি বলেন, “বহু মামলায় জামিন দিচ্ছে না, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ক্ষমতাশীলরা মনে করে, তাদের অধিকার আছে, কিন্তু অন্যের নেই—এমন ভাবনা থেকে সরে আসা প্রয়োজন।”
বিচারব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন তুলে ধরে সারা হোসেন বলেন, “মানুষ যেন বিচার চায়, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তির বিরোধিতাও তিনি করেন।”
অপর দিকে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায় হলে তারা ভয়ে বিচারপ্রার্থীতেও যেতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “আমরা কি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছি? এর জন্য আমাদের আরও অগ্রসর হতে হবে।”
এছাড়া, গোলটেবিলে উপস্থিত ছিলেন লেখক, চিন্তক ফরহাদ মজহার, গবেষক ও বিশ্লেষক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, গবেষক মাহা মীর্জা, তরুণ গবেষক সহুল আহমদ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আলোচনা ও মতবিনিময় চলছিল এই অস্থির পরিবেশে দেশের বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ও গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব নিয়ে।
১২৮ বার পড়া হয়েছে