দুদকের পক্ষে এত দুর্নীতির বিচার সম্ভব নয়: বিচারক

বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫ ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (২৩ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। শুনানির সময় বিচারক বলেন,
“এত বিপুল দুর্নীতি দুদকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে বিচারের আওতায় আনা ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়, অথচ শাস্তি হয় মাত্র পাঁচ বছরের।”
আদালতে যা ঘটেছে
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ড. আবুল বারকাতকে আদালতে হাজির করা হয়। ১১টা ৭ মিনিটে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হয়, এ সময় তাকে চিন্তিত দেখা যায়। জামিনের পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুর ইসলাম।
আইনজীবী বলেন,
“২০১৩ সালে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এননটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সুপ্রভা স্পিনিং মিলসকে ঋণ দেওয়া হয়। এখানে আবুল বারকাত নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় ঘটাননি। আগেই দুদকের এক অনুসন্ধানে তাকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছিল। একই বিষয়ে আবার মামলা করাটা দ্বিচারিতা।”
অন্যদিকে দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন,
“চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডের দায় তারও নিতে হবে। অপরাধে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ আছে বলেই মামলায় সাবেক গভর্নরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
শুনানির সময় বিচারক বলেন,
“ওয়ান ইলেভেনের সময় ‘ট্রুথ কমিশনে’ অনেকেই দুর্নীতি স্বীকার করে সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দিয়েছিল। বর্তমান সরকারের সময়েও এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং অর্থ পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে—এটি নজিরবিহীন।”
তিনি আরও বলেন,
“সব অভিযোগে আপনি (আবুল বারকাত) জড়িত—তা আমি বলছি না। তবে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। বিষয়গুলো গভীরভাবে বিচারাধীন।”
এরপর আদালত আবুল বারকাতের জামিন আবেদন খারিজ করেন এবং তিন দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য মামলাটি সিএমএম আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাকে আবার আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।
মামলার প্রেক্ষাপট
গত ২০ ফেব্রুয়ারি এননটেক্স গ্রুপের নামে জনতা ব্যাংক থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও অধ্যাপক বারকাতসহ অন্যরা যোগসাজশে অনৈতিকভাবে ২২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ মঞ্জুর করেন এবং অর্থ আত্মসাৎ করেন।
গত ১০ জুলাই ডিবি পুলিশ তাকে রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে, এবং পরদিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১৪০ বার পড়া হয়েছে