কুষ্টিয়ায় রজনী ইসলামের দাফন সম্পন্ন

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫ ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনায় নিহত রজনী ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল ৯টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
দাফনে অংশ নেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ গ্রামের শতাধিক মানুষ। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এক সন্তানের জননী হারিয়েছে পরিবারটি। এই ক্ষতি কখনও পূরণ হবার নয়।”
নিহত রজনী ইসলাম ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী এস এম জুমজুমের মা। সোমবার মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় উত্তরার কাছে একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রজনী।
রজনীর স্বামী জহুরুল ইসলাম প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকায় গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দুর্ঘটনার সময় তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। স্ত্রী নিহত হওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঢাকায় ফিরে আসেন তিনি। সামরিক হাসপাতালে গিয়ে স্ত্রীকে শনাক্ত করেন।
জহুরুল বলেন, “রজনীর মাথার পেছনে আঘাত ছিল, শরীরে পুড়ার চিহ্ন নেই। ধারণা করছি, বিমানের কোনো অংশ আঘাত করেছে। এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। মেনে নেওয়া কষ্টকর।”
রজনীর বাবার বাড়ি পাশের মেহেরপুর জেলার গাংনি উপজেলার বাওট গ্রামে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকার সামরিক হাসপাতাল থেকে মরদেহ হস্তান্তরের পর রাতেই পরিবারের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে রওনা দেন গ্রামের উদ্দেশে। ভোরে বাওটে কিছুক্ষণ রাখা হয় মরদেহ, পরে সকাল ৭টার দিকে সাদিপুরের নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় রজনীর ছোট ছেলে এস এম রোহান অসুস্থ থাকায় স্কুলে যায়নি। বড় ছেলে এস এম রুবাই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। দুর্ঘটনার পরপরই পরিবারের অন্য সদস্যরা স্কুলে ছুটে গিয়ে ছোট মেয়ে জুমজুমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
রজনীর দেবর আহসানুল ইসলাম জানান, “তিন সন্তানের লেখাপড়ার বিষয় নিয়ে রজনী ছিলেন খুবই সচেতন। মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে এমন দুর্ঘটনায় পড়ে যেতে হবে, সেটা ভাবিনি কখনও।”
দাফনের সময় পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। আশপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ ছুটে আসেন রজনীর মরদেহে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে। তিন সন্তান—জুমজুম, রোহান ও রুবাই—মায়ের মৃত্যুতে নির্বাক হয়ে পড়ে। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে ঢাকার উত্তরায় একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে বিধ্বস্ত হলে ঘটনাস্থলে রজনী ইসলাম নিহত হন। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তাধীন রয়েছে।
১১৯ বার পড়া হয়েছে