জাতীয়

মুহূর্তেই সব শেষ, আছে শুধু দীর্ঘশ্বাস আর স্মৃতি

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫ ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
প্রতিদিনের মতো শিশুর কোলাহল নেই, পড়ে আছে শুধু পোড়া বই-খাতা আর স্কুলব্যাগ। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় মুহূর্তেই শোকস্তব্ধ। বদলে গেছে চেনা দৃশ্যপট।এখন সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ ও বিষণ্নতা।

অসুস্থতার কারণে দুই দিন স্কুলে যেতে পারেনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. আফনান ফাইয়াজ। গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) অসুস্থ শরীর নিয়েই গিয়েছিল স্কুলে, তবে আর ফিরে এলো না সে। মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মারা যায় সে।


ফাইয়াজ অসুস্থ ছিল, গত দুই দিন ক্লাসে যায়নি। মাইলস্টোনের নিয়ম হলো- একটানা তিন দিন ক্লাস না করলে শাস্তি থাকে, তাই সোমবার অসুস্থ শরীরেই স্কুলে যায় ফাইয়াজ। তারপর আর ফিরে আসে না সে। 


মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ তৃতীয় শ্রেণির রাইসা মনিকে খুঁজতে খুঁজতে পাগলপ্রায় পরিবার। গতকাল থেকেই তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন পরিবারের সদস্যরা, কিন্তু কোথাও দেখা মেলেনি তার। আজও ঘটনাস্থলে এসেছেন তারা।

তবে পাওয়া যায়নি রাইসা মনিকে, শুধু সন্ধান মিলেছে তার খাতা আর ব্যাগের। রাইসাদের বাসা উত্তরার দিয়াবাড়ি। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। কোথাও তার খোঁজ মিললে ০১৯২৪০৬২০৩০ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

“আম্মু, স্কুলে যাচ্ছি, টাটা বাই বাই”- এটাই ছিল সায়মার সাথে মায়ের শেষ কথা। এভাবেই মেয়ের সঙ্গে শেষ স্মৃতি স্মরণ করে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহত সায়মা আক্তারের মা রিনা বেগম। দুপুরে ফেসবুকে জানতে পারে, সায়মা আর বেঁচে নেই। ৯ বছরের সায়মা আক্তার ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বড় ভাই সাব্বির হোসেন এবছরই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেছে। ভাইয়ের কলিজার টুকরা ছিলো বোন। সায়মার বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার এক বন্ধু ফোন করে জানায়, স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর সারা দিন খোঁজাখুঁজি করেছি, পাইনি। রাত ৮টার দিকে জানতে পারি সিএমএইচে মরদেহ আছে। 

 


 
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামির (১১)। তার বাবা শামিম চৌকিদার উত্তরায় বায়িং হাউজের ব্যবসা করেন। তার মা রেশমা হাওলাদার ঢাকা উত্তরায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে লেখা পড়া করতেন। তারা দুই ভাইবোন ছিল। ভাইবোনের মধ্যে নিহত সামির ছোট। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার আগের দিন মায়ের সঙ্গে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়েছিল সামির।

 

 



স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে প্রাণ হারালেন মা। প্রতিদিনের মতোই সোমবার দুপুরে স্কুল শেষে মেয়েকে আনতে গিয়েছিলেন রজনী। এ সময় হঠাৎই একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুলের ভবনে আছড়ে পড়ে। বিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন রজনী খাতুন। মেয়েটি অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও মায়ের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ পরিবার।

 

 

‘আমার নাতি নাহিদ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। আমার কলিজার টুকরা আর নাই। আজরাইলে নিছেরে, আমার কলিজারে আজরাইলে নিছে।’ সোমবার (২১ জুলাই) জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে রাস্তায় বসে এভাবেই আহাজারি করেন মোসলেম উদ্দিন। মোসলেম উদ্দিন নিহত নাহিদের নানা।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া উম্মে মরিয়ম এখনও নিখোঁজ রয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকেই সে নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন আফিয়ার বড় ভাইয়ের বন্ধু আলভী। আফিয়ার খোঁজ নিতে মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এসেছিলেন টঙ্গি নিবাসী আলভী। এখানেও আফিয়ার খোঁজ পাওয়া যায়নি। আলভী জানান, ‘বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ আফিয়া। তার পরিবার তাকে খুঁজতে উত্তরাসহ সব হাসপাতালে গেলেও আফিয়াকে পায়নি। কোনো হাসপাতালের ভর্তির তালিকায় সে নেই। যেহেতু কোনো হাসপাতালে তাকে পাওয়া যায়নি, সেহেতু তার পরিবারের ধারণা- আফিয়া এখনও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আছে। তার পরিবার এখনও আশা ছাড়েনি।’

 

১১৭ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন