বন্ধন ছিন্ন এই সাহসিনী: শিক্ষিকা মেহরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগে কেঁদে উঠল জাতি

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫ ৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানীর উত্তরা, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গত ২১ জুলাই শিক্ষার্থী-কণ্ঠে পাঠরত ক্লাসরুম হঠাৎই পরিণত হয় বিভীষিকার নিদর্শনে—বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান স্কুলের বিল্ডিংয়ে ধসে পড়ে, মুহূর্তেই অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে। এই অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতায় বিপন্ন হয় শত শত শিক্ষার্থীর জীবন।
সেই মুহূর্তে সামনে এসে দাঁড়ান বাংলা ভার্সনের কো-অর্ডিনেটর, প্রাইমারি সেকশনের শিক্ষক মেহরীন চৌধুরী। ক্লাস শেষে ছোট্টদের হাত ধরে গেট পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছিলেন। স্বস্তি ছুঁয়ে যায় ছাত্রছাত্রীর মুখে—কিন্তু অকস্মাৎ আগুন ও ধোঁয়ার ঘূর্ণিঝড়।
মেহরীন চৌধুরী ছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি চৌধুরীপাড়া গ্রামের কন্যা। দেশের পশ্চিম প্রান্তের এক স্কুলেও সম্প্রতি অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, স্বপ্ন ছিল নিজ গ্রামে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
বিমান বিধ্বস্তের পর মুহূর্তে তিনি দৌড়ে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে থাকেন—না-ভেবে বুক পুড়িয়ে ২০জন শিশুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন। গুরুতর দগ্ধ শরীর নিয়ে বারবার, বারবার শ্রেণিকক্ষ ও করিডোরে ছোটেন, নিরাপদে বের করেন শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে বলে—“ম্যাডাম বলছিলেন, দৌড়াও, ভয় পেও না, আমি আছি।”
সময়ে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে করেছিলেন তিনি।
একটি সেনা সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান—মেহরীন ম্যাডাম না থাকলে আরো প্রাণহানি ঘটত। নিহত শিক্ষার্থী ছোয়ার পরিবারের ভাষ্য, “ম্যাডাম না থাকলে আমাদের ছোয়া বাঁচত না।”
সবশেষে শতভাগ পুড়ে যাওয়া শরীরে শিক্ষার্থীদের তাড়িয়ে, নিজে বের হতে পারেননি। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে সন্ধ্যায় মারা যান মেহরীন চৌধুরী। স্কুল কাঁদে, এলাকাবাসী শোকাহত—তিনি ছিলেন কেবল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, দেশের প্রতিটি কোমলমতি সন্তানের জন্য আদর্শ শিক্ষক। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও নাগরিক সমাজ, সবাই তাঁর আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
আমরা এই বীর শিক্ষিকার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
তাঁর অসামান্য ত্যাগ জাতির চেতনায় চিরকাল জীবন্ত থাকবে—এই হলো এক শিক্ষিকার প্রকৃত পরিচয়।
১২০ বার পড়া হয়েছে