চাঁদে মানুষের প্রথম পদচারণার ৫৬ বছর: আজও চলছে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫ ১:৪০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
চাঁদে মানুষের প্রথম পা রাখার ৫৬ বছর পূর্তি আজ। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই, মার্কিন নভোযান অ্যাপোলো ১১ চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে, যা মানব ইতিহাসের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়।
সেই ঐতিহাসিক অভিযানে চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখেন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং। তার বিখ্যাত বাক্য— “একজন মানুষের জন্য ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য বিশাল অগ্রগতি”— আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
তবে এই সাফল্যের পর থেকেই এই ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হতে থাকে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কেউ কেউ এখনো দাবি করেন, চাঁদে অবতরণ ছিল সাজানো, যার নেপথ্যে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মহাকাশ প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে জেতানো।
স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিকূলতা থেকে শুরু
১৯৬১ সালের ২৫ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ঘোষণা দেন, "এই দশকের মধ্যেই চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হবে।" সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ সাফল্যের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে ছিল। কেনেডির এই ঘোষণা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
সফলতা ও দুর্ঘটনার ইতিহাস
চাঁদে মানুষ পাঠাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসাকে পাড়ি দিতে হয় বহু চড়াই-উতরাই।
১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি, একটি পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের সময় আগুন লেগে প্রাণ হারান তিন নভোচারী।
এরপর ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে সফলভাবে উৎক্ষেপণ হয় অ্যাপোলো ৭।
ডিসেম্বরে, অ্যাপোলো ৮ চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে ফেরে।
আর ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই, শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান—অ্যাপোলো ১১-এর যাত্রা।
চাঁদের বুকে ঐতিহাসিক পদচারণ
২০ জুলাই, বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং। কিছুক্ষণ পর তাঁর সঙ্গী বাজ অলড্রিনও নামেন চাঁদের বুকে। এ সময় তাঁদের সহকর্মী মাইকেল কলিন্স কক্ষপথে মূল কমান্ড মডিউলে অবস্থান করছিলেন।
তাঁরা মার্কিন পতাকা স্থাপন করেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালান এবং প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ফিরে আসার পথচলা
২১ জুলাই ভোরে লুনার মডিউলে ফিরে ঘুমান দুই নভোচারী। পরে মূল মহাকাশযানে ফিরে যোগ দেন মাইকেল কলিন্সের সঙ্গে।
২৪ জুলাই, তাঁরা প্রশান্ত মহাসাগরে নিরাপদে অবতরণ করেন। চাঁদের বুকে রেখে আসেন একটি ফলক, যেখানে লেখা ছিল:
“জুলাই, ১৯৬৯। পৃথিবী গ্রহ থেকে মানুষ প্রথমবার এ চাঁদের বুকে পা রেখেছে। সমস্ত মানবজাতির শান্তির বার্তা নিয়ে আমরা এসেছি।”
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিস্তার ও বৈজ্ঞানিক প্রতিক্রিয়া
চন্দ্র অভিযানের কিছুকাল পর থেকেই ছড়াতে থাকে নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। ষাট ও সত্তরের দশকে কেউ কেউ বলেন, গোটা অভিযানটি নাকি হলিউড-স্টাইলের স্টুডিওতে ধারণ করা।
জনপ্রিয় ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো হলো:
পতাকা কেন বাতাসে উড়ছিল:
জবাব—চাঁদের পতাকাটিকে দাঁড়িয়ে রাখতে বাঁকা রড ব্যবহার করা হয়েছিল। বাতাসে ওড়ার মতো দেখালেও এটি ছিল স্থির।
আকাশে তারা নেই কেন:
জবাব—দিনের আলোয় তোলা ছবিতে কম আলোয় দৃশ্যমান তারা ধরা পড়ে না, বিশেষ করে কম এক্সপোজারে।
ছায়ার মধ্যে বস্তুর দৃশ্যমানতা:
জবাব—চাঁদের মাটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে, তাই ছায়ায়ও আলো পৌঁছায়।
ক্যামেরা দেখা যায় না কেন:
জবাব—আর্মস্ট্রংয়ের ক্যামেরা ছিল স্পেসস্যুটের বুকের অংশে লাগানো, হাতে নয়।
পায়ের ছাপের সঙ্গে জুতার মিল নেই:
জবাব—চাঁদে হাঁটার জন্য পরা হয়েছিল বিশেষ ‘লুনার ওভারশু’। মূল বুট জাদুঘরে রাখা, ছাপটি এসেছে এই বাড়তি জুতা থেকে।
চাঁদে যাওয়ার প্রমাণ অজস্র
পরবর্তী অ্যাপোলো মিশনগুলো এবং চন্দ্রপৃষ্ঠে পাঠানো আধুনিক অভিযানের ছবি ও তথ্য বারবার প্রমাণ করেছে—অ্যাপোলো ১১ একটি বাস্তব ঘটনা।
নাসা এমন বহু ছবি প্রকাশ করেছে যেখানে চাঁদের মাটিতে নভোচারীদের পদচিহ্ন, ফেলে যাওয়া যন্ত্রপাতি ও ল্যান্ডার স্পষ্ট দেখা গেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী রিক ফিয়েনবার্গ বলেন, “যারা চন্দ্র অভিযান অস্বীকার করেন, তাদের যুক্তিগুলো বিজ্ঞান নয়, বরং রাজনৈতিক বা আদর্শগত উদ্দেশ্যপ্রসূত।”
অ্যাপোলো ১১ শুধু একটি চন্দ্রাভিযান নয়, এটি মানব ইতিহাসে সাহস, প্রযুক্তি ও কল্পনার চূড়ান্ত সাফল্যের প্রতীক।
১১০ বার পড়া হয়েছে