ফেবু লিখন

বাবার স্মৃতিচারণ

আল মাসুম
আল মাসুম

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫ ৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
আজ ১৯শে জুলাই। আমার আব্বা এস.এম. আনোয়ারুল ইসলাম এর ২৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার আব্বার জন্ম কুষ্টিয়া জেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামে ১৯৩৩ সালে।

সঠিক দিন তারিখ জানা যায়নি তবে সালটা আমার সেজো ফুপুর মুখে শোনা। তিনি আমার আব্বার থেকে বয়সে অনেক বড় ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আব্বা ছিলেন ছোট। তাই গ্রামের লোকজন আব্বাকে ছোড ভাই অথবা আনোয়ার শেখ বলে ডাকতো। আব্বা পড়াশোনা এবং খেলাধুলায় খুবই ভালো ছিলেন।

 

কৈশোর যৌবনে আব্বা খুব নামকরা ফুটবলার ছিলেন। দূর দূরান্তে হায়ারে খেলতে যেতেন ঘোড়ায় চড়ে। এসব আব্বার বন্ধুদের মুখ থেকে পরবর্তীতে শোনা। আমার মনে আছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমি দেখেছি আমাদের গ্রামের বাড়িতে আব্বার রুমে অনেকগুলো বিভিন্ন সাইজের চিল্ড-ট্রফি-সার্টিফিকেট দেওয়ালে বাঁধানো ছিল। মুক্তিযুদ্ধে আমার বড় চাচা সোনা শেখ শহীদ হোন। যুদ্ধের শেষের দিকে আর্মিরা আমাদের গ্রামের বাড়িঘর সব পুড়িয়ে দেয়। সেই বিভিষিকাময় আগুনের সাথে আব্বার সব পুরস্কার পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

 

আমার ভাবতে অবাক লাগে সেই সময় আব্বা কত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছিলেন লোকের বাড়িতে জায়গির থেকে। আমলার ছাতারপাড়া গ্রামে আমাদের কোন এক আত্বীয় বা পরিচিত কারো বাড়িতে থাকতেন। আব্বা মেট্রিকুলেশন পাস করেছিলেন আমলা হাই স্কুল থেকে। এবং ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছিলেন আমলা কলেজ থেকে। পরবর্তীতে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। পাকিস্তান পিরিয়ডে আব্বা কুষ্টিয়া ডিসি কোর্টে নেজারতখানায় ছোট নাজির হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন সুনামের সাথে চাকরি করেছেন।

 

বহু মানুষের চাকরি দিয়েছেন তিনি। অনেকের রুটি রুজির ব্যবস্থা করতেন। সদা হাস্যজ্জল আব্বা অকৃত্রিম ভালোবাসায় সবাইকে আপন করে নিতেন। দারুন রসিকতা করতেন আমাদের সাথে। বন্ধু সুলভ ব্যবহার করতেন সব সময়। আব্বার সাথে আমরা ফ্রি ছিলাম। অনেক বড় সংসার ছিল আমাদের। ৭০ দশকের শেষের দিকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে আইন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেন।

 

মানুষের হিসাবে আব্বা অসাধারণ ছিলেন। বিশাল মনের অধিকারী, পরোপকারী, স্বজন মানুষ ছিলেন। দয়ালু স্বভাবের আব্বা সকলের কাছে প্রিয় পাত্র ছিলেন। যে কোন বিপদে ছুটে যেতেন। মানুষের পাশে থাকতেন। যতটুকু পারতেন সাহায্য করতেন। বুদ্ধিদীপ্ত চৌকস উদার ধর্মপ্রাণ মিষ্টভাষী রসিক মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল। আতিথিয়তায় তার তুলনা ছিলনা। মানুষকে খাওয়াতে তিনি খুব পছন্দ করতেন। জীবদ্দশায় আব্বা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটির জয়েন সেক্রেটারি এবং ঈদগাহ পাড়া জামে মসজিদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আব্বা স্ট্রোকজনিত কারণে আজকের এই দিনে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আমাদের দুই মা বিগত হয়েছেন, আমরা নয় ভাই বোন সবাই আজও জীবিত আছি। পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি উনি যেন আব্বাকে বেহেস্ত নসিব দান করেন। 

লেখক: মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

১২৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন