জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫ ৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আজ ঢাকায় জামায়াতে ইসলামী আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বিশাল জনসমাবেশ করেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনীতিতে তারা এটিকে 'টার্নিং পয়েন্ট' হিসেবে ব্যাখ্যা করছে এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের জমায়েত ঘটাতে চায়।
নিঃসন্দেহে, জামায়াতের মতো একটি সংগঠিত দলের পক্ষে এমন সমাবেশ আয়োজনে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রাজনৈতিক কোন বাধা নেই এই সমাবেশে আসতে, বরং সরকারের পক্ষ থেকে তিন জোড়া রেল দেওয়া হয়েছে লোক আনার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই সমাবেশের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী?
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের স্মরণ রাখা উচিত—১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধিতা এবং হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত এই দলটি আজও জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।
সেই অনুতাপহীন অতীতের বোঝা কাঁধে নিয়ে, ১০ লাখ তো দূরের কথা—এক কোটি লোকের জমায়েত করলেও সাধারণ মানুষের মন পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষ ভোট দেয় অতীত স্মরণে রেখেই।
ড. ইউনূসের আশীর্বাদপুষ্ট এনসিপি ও চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তারা কিছুটা আলোড়ন তুলতে পারে, বেশ কিছু ভোটও পেতে পারে। তবে সেটা হবে জনসমর্থনের ভোট নয়—বরং যদি সরকার এবং সেনাবাহিনী একযোগে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে পাকিস্তানের শেষ নির্বাচনের মতো ইমরান খানের বিজয় কারচুপির মাধ্যমে যেভাবে মুসলিম লীগ- পিপিপিরকে দেওয়া হয়েছিল, তাদের হাতেও তুলে দেওয়া হতে পারে।
আর এককভাবে ক্ষমতার স্বাদ পেতে হলে, তাদের সামনে কেবল একটাই পথ—ইরানের মডেলের বিপ্লব। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা, ইতিহাস এবং জনগণের মানসিকতা সে ধরনের বিপ্লবের পক্ষে নয়—বরং তার বিরুদ্ধে।
সুতরাং শুধু দলীয় সমর্থকদের ভোট দিয়ে ক্ষমতার চাবি মেলানো অসম্ভব। তবে জামায়াতের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি মুছে যায়নি—যদি তারা অতীত ভুল স্বীকার করে, যুদ্ধাপরাধী ভাবমূর্তি থেকে সরে এসে জনগণের সামনে এসে দুঃখ প্রকাশ করে।
ক্ষমা চাওয়া দুর্বলতা নয়—বরং সাহসের কাজ। এই সত্য উপলব্ধি করলেই তাদের সামনে নতুন পথ খুলে যেতে পারে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া হয়েছে)
১৬৪ বার পড়া হয়েছে