জাতীয়

৬২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, দুদকের জালে তারিক পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বৃহস্পতিবার , ১৭ জুলাই, ২০২৫ ১২:২৫ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক ও দুই কন্যার নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অনুসন্ধানে এসব সম্পদের মূল্য প্রায় ৬২ কোটি টাকা ধরা হলেও, বাস্তবে এর পরিমাণ কয়েক শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, তারিক সিদ্দিকের নামে ২৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার, তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিকের নামে ২৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার এবং তাদের দুই মেয়ে—নূরিন তাসফিয়া সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিকের নামে যথাক্রমে ৩ কোটি ৩৭ লাখ এবং ৪ কোটি ৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মিলেছে।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলার সুপারিশ করতে যাচ্ছে দুদক। পাশাপাশি, তারিক ও শাহিন সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছে।

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান ও মামলার ভিত্তি হচ্ছে দালিলিক প্রমাণ। যদিও বাজারমূল্যে এসব সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি, আদালতে প্রমাণযোগ্যতার জন্য দালিলিক মূল্যই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তারিক সিদ্দিকের নামে রয়েছে বারিধারা ডিওএইচএসে একটি সাততলা বাড়ি, গুলশানে তিনটি ফ্ল্যাট এবং পূর্বাচলের ৭ নম্বর সেক্টরে একটি প্লট। ব্যাংকে রয়েছে ১৭ কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ।

তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিকের নামে পূর্বাচল নতুন শহরের ২১, ২৬ ও ৩০ নম্বর সেক্টরে একাধিক প্লট, বারিধারা মডেল টাউনে দুটি বড় ফ্ল্যাট, ডিওএইচএসে আরও একটি ফ্ল্যাট এবং ব্যাংকে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে।

অসঙ্গতিপূর্ণ আয় ও আইনি প্রক্রিয়া
দুদকের হিসাব অনুযায়ী, তারিক সিদ্দিকের মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪৮ কোটি টাকার বেশি, যেখানে তার গ্রহণযোগ্য আয় মাত্র ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ২৯ কোটি টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, শাহিন সিদ্দিকের ক্ষেত্রেও প্রায় ২৫ কোটি টাকার সম্পদ তার আয় উৎসের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার নামে ১১টি ব্যাংক হিসাবে ৫৯ কোটির বেশি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

মেয়েদের সম্পদ ও ব্যাখ্যা
দুদক বলছে, দুই কন্যা—নূরিন তাসফিয়া ও বুশরা সিদ্দিক—এর নামে যে ৮ কোটির বেশি টাকার সম্পদের তথ্য মিলেছে, তার পুরোটাই নগদ অর্থ ও অস্থাবর সম্পদ। এসব অর্থমূল্যও মূলত বাবা-মায়ের সম্পদ হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

সামরিক পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার
তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময় তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এই অপরাধ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ২০০৪-এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।

তার নামে চারটি ব্যাংক হিসাবে ৬২ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তার এক ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি জব্দ করেছে দুদক।

পূর্বের মামলা ও চলমান অনুসন্ধান
এর আগে, ২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারি, তিনটি বিমানবন্দরের চার উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক সচিব মহিবুল হক ও বেবিচকের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করে দুদক। প্রতিটি মামলায় তারিককে আসামি করা হয়।

এছাড়া, গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে আরও একটি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অভিযুক্তদের তলব করলেও কেউ দুদকে হাজির হননি।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
দুদক জানিয়েছে, যেহেতু অনুসন্ধানে যথাযথ প্রমাণ পাওয়া গেছে, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলাগুলোতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে।

১০৮ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন