ফেবু লিখন

রাজনীতির গালি ও গালির রাজনীতি

হোসেন কামাল
হোসেন কামাল

বৃহস্পতিবার , ১৭ জুলাই, ২০২৫ ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসব সময়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গালি গালাজ। অশ্রাব্য - কুশ্রাব্য - সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বা সুস্থভাবে উচ্চারণযোগ্য নয় এমন কথাবার্তা আজ আমাদের রাজনীতিতে পাকাপোক্ত আসন গেড়ে নিয়েছে কিনা, সে বিষয়ে অনেকেই হয়তবা চিন্তিত হতে পারেন।

যদিও বাংলাদেশে সুশীল বলে কথিত যে সমাজ রয়েছে বা যারা প্রতিবাদ করতে পারেন বা দেশের তরুণ সমাজকে পথ দেখাতে পারেন বলে ভাবা হয়েছিল, তারা ইতিমধ্যেই তাদের স্বরূপ প্রকাশ করে ফেলেছেন। তারা যে আদতে সুবিধাবাদী বা সমাজের লুম্পেন শ্রেণীভুক্ত তা দেশবাসী ইতিমধ্যেই জেনে গেছে, তা বলাই বাহুল্য। তবুও আমরা যারা কিছু বলতে পারি, তারা কি চুপ করে বসে থাকবো??

নাহ, থাকবো না, থাকতে পারি না। সমাজ যে আমাদের কাধে সেই দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। কেউ বলছে না বলে আমিও বলবো না, এমনটি হতে পারে না।
প্রথমেই দেখা যাক গালি গালাজ কি? এর ফলাফলই বা কি?

মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়-- "গালি গালাজ হল একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, যা সুস্থ মানুষের সাধারণভাবে মানুষের রাগ, হতাশা বা বিরক্তি প্রকাশের হাতিয়া হিসাবে কাজ করে।"
এটাই যদি কারণ হিসাবে দেখিয়ে থাকেন মনস্তত্ত্ববিদরা, তাহলে আমাদের দেশে তো মিলছে না। এখানে সুস্থ মানসিকতার উপাদানের অনুপস্থিতি পরিষ্কারভাবেই দেখা গেল গত তিন/চার দিনে।
একজন দলীয় প্রধানকে বা বয়স্ক নেত্রীর আন্ডারগার্মেন্টস দেখানোর মাঝে কিইবা এমন বীরত্বের প্রকাশ তা আমার মাথায় ঢোকে না।
অবশ্যই এ রীতির উন্মেষ ঘটেছে গত বছরের গণ ভবন আক্রমণের মাধ্যমে। এখনও তা চলছে। কতদিন চলবে এমন রীতি?
এটি কি আমাদের দেশের রাজনীতিতে স্থায়ী আসন গেড়ে নিতে চলেছে?
এটি ভীষণ চিন্তার বিষয়! ভদ্রভাবে নারী-পুরুষ সকলে মিলে কি রাজনীতি করা দূরহ হয়ে উঠবে?
সমাজে এর এক দুঃসহ প্রভাব পড়বে এবং পরতে বাধ্য। আর চিন্তার বিষয় হল, ভুলে বা প্রভাবে হোক, দেশবাসী যাদের উপর অহেতুক আস্থা রাখতে চেয়েছিল, তারা এখন এ সময়ে একদিকে যেমন আমাদের সমাজে বিভক্তির সৃষ্টি করলো, অন্যদিকে তারা সামনে নিয়ে এলো - নোংরামি।

একথা তো সত্যি যে, আমাদের দেশের কিছু ভূইফোড় নেতা, নামধারী কালপ্রিট, এই অবস্থা আনে। তারা "কথায়, কাজে, আশ্বাসে, আহ্বানে" কবে তাদের হুশ ফিরবে, তা তারাই জানেন। তবে দ্রুতই সেই উপলব্ধি ফেরত আনলেই মঙ্গল। বিষয়গুলো স্থায়ী আসন গেড়ে নেওয়ার পূর্বেই তাদের মাথায় এই উপলব্ধি আসুক যে -- "আপনি যতই নিচু মানের পরিবার থেকে উঠে আসুন না কেন, আমাদের সমাজে এমন বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আর রাজনীতিতে তো নয়ই। রাজনীতিতে ভদ্রতা পৃথকভাবেই অবস্থান নিয়ে আছে। আপনি ইচ্ছে করলেই আবহাওয়া কলুষিত করতে পারেন না।"
থেমে যান এখুনি।

আর আমাদের মানুষগুলোকে বলবো, "আমি কখনই রাজনীতিতে এই অশ্রাব্য, কুশ্রাব্য গালিগালাজ দেওয়া সমর্থন করি বা করবোও না। আপনারাও কাউকেই গালি গালাজ করবেন না।"
মনে রাখুন, এ ধরনের গালি গালাজ শুধুই মাত্র আপনার পরিবার, বাবা, মা, শিক্ষা, আচার, ব্যবহার এর দিকেই নজর দেয়।
মনে রাখুন, আমাদের রাজনীতির একটা ঐতিহ্য আছে। আর সেই ঐতিহ্যের পথ ধরে আমরা পেয়েছি আমাদের বাংলা ভাষার সম্মান, একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমাদের স্বাধীনতা।
এখন কেউ হঠাৎ করে এসে সব পাল্টে ফেলতে চাইলে তা পাল্টাবে না।

সমাজ পরিবর্তনে এহেন অপশক্তি বা বন্দোবস্ত মোটেও দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এই সমাজ তো আর একদিনে গড়ে ওঠে নাই। আমাদের ঐতিহ্য আছে, সমাজ আছে, পরিবার, অনুশাসন ও অনুশীলন আছে।
"তুমি কে আমি কে -- রাজাকার, রাজাকার" গানের মধ্যে কোনই বাহাদুরি নেই। বরং এর মাঝে নিজের মাঝেই প্রতিষ্ঠিত হয় হীনমন্যতা বোধ কেননা এ দেশের মানুষের কাছে "রাজাকার" শব্দটি একটি গালি ছাড়া কিছুই নয়।

আর তাই তো আপনাদের আবারো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি ---
আমরা কাউকে গালি দেবো না, দিতে পারি না।
তবে, রাজাকারকে রাজাকার বলবো।
আর আমাদের পরের প্রজন্মকে বলতে শেখাবো- আমাদের স্বাধীনতার ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস।

লেখক: সামাজিক অ্যাকটিভিস্ট ও রাজনৈতিক কর্মী।

২৮০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(4)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
ফেবু লিখন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন