বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মোড়

বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫ ৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বিভিন্ন সমসাময়িক ইস্যুকে ঘিরে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মোড় এসেছে।
দলটি এখন একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর, অন্যদিকে তেমনি বাইরে থেকে আসা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান আরও দৃঢ় করছে।
সম্প্রতি পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘিরে শুরু হওয়া ‘পরিকল্পিত অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। দলের নেতারা বলছেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনার মাধ্যমে তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার চেষ্টা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত সোমবার সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও জনসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি তাদের প্রতিবাদ জানায় এবং সংগঠিত শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় এবার আরও কঠোর হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলের ভেতরে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে শতাধিক নেতাকর্মীর তালিকা তারেক রহমানের হাতে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার এবং আরও দুই হাজারকে শোকজ করা হয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—"দল কোনোভাবেই দুর্নীতিবাজ ও উচ্ছৃঙ্খল নেতাদের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও সোপর্দ করা হবে।"
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে, দলের জনপ্রিয় নেতাকে টার্গেট করেই চলছে এই অপপ্রচার। বিশেষ করে, তারেক রহমান দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সময়ে, ‘পরাজিত গোষ্ঠী ও ক্ষমতালোভী চক্র’ তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “মিথ্যার পেছনে লুকিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। বিএনপি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিবাদের মাধ্যমেই এর মোকাবিলা করবে।”
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও একে ‘রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, "তারেক রহমান ১০ হাজার মাইল দূরে থেকেও দেশের জনগণকে সংগঠিত করে চলেছেন, যা ষড়যন্ত্রকারীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
দলীয় সূত্রে জানা যায়, পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা বিএনপির ছায়ায় ঢুকে পড়েছে। অতীতে যেসব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন, তারাই এখন নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে ‘নব্য বিএনপি’ নামে পরিচিতি পাচ্ছেন। এদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছে দলেরই কিছু প্রভাবশালী নেতা। এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির বিশেষ সহকারী বদরুল আলম চৌধুরী শিপুল বলেন, “তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা প্রতিহত করতেই ষড়যন্ত্র চলছে। তবে বিএনপি অতীতেও আন্দোলনের মাধ্যমে দমন-পীড়ন মোকাবিলা করেছে, ভবিষ্যতেও জনগণকে সঙ্গে নিয়েই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।”
মানবাধিকার সংস্থা ও পর্যবেক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিরোধের জেরে গত এক বছরে ৮০ জনের বেশি নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন, সংঘর্ষে আহত হয়েছেন হাজারো জন।
তবে দলীয় নেতারা বলছেন, অপশক্তি ও ষড়যন্ত্র যতই থাকুক না কেন, বিএনপি সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিকভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। অপপ্রচার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দল ‘নির্বিচারে ও নিরপেক্ষভাবে’ ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং নেবে।
১৩৪ বার পড়া হয়েছে