দেশজুড়ে চাঁদাবাজবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেফতার ১,৫৭২ জন

বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫ ৪:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলমান সহিংসতায় জনজীবনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস দমনে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে পুলিশের ‘সাঁড়াশি অভিযান’।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি রোধে মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১,৫৭২ জনকে। তাদের মধ্যে ওয়ারেন্টভুক্ত ও মামলার আসামি ১,১০৭ জন এবং বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার ৪৬৫ জন।
অভিযান প্রসঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে পুলিশের সব ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাট-বাজার, বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড, টার্মিনাল, রেলস্টেশন থেকে শুরু করে ফুটপাত পর্যন্ত চাঁদাবাজদের ধরতে তৎপর রয়েছে পুলিশ ও র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
‘কোনো দলীয় পরিচয় নয়, অপরাধীই মুখ্য’
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, চাঁদাবাজ যেই হোক, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে তদবিরেও মুক্তি দেওয়া হবে না। আটক চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত ও এক মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে।
চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ইতোমধ্যে ৪৫৭ পৃষ্ঠার একটি গোপনীয় প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে ২,০৩১ জন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ডিএমপি ও গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ তৎপরতা
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, মহানগরের প্রতিটি থানাকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। থানার ওসি থেকে শুরু করে ডিসি, এসি ও গোয়েন্দা ইউনিটকে মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ঢাকায় এলাকাভিত্তিক গোয়েন্দা টিমকে চাঁদাবাজদের তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা খারাপ সুনাম রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ডিটেনশন বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘উঁচু লেভেলের চাঁদাবাজরাও রেহাই পাবে না’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কক্সবাজারে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যত উঁচু লেভেলের চাঁদাবাজ হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে পুলিশের চলমান সাঁড়াশি অভিযানকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ এখন দেখছে—এই অভিযান কতটা টেকসই ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয়, সেটিই আসল প্রশ্ন।
১১২ বার পড়া হয়েছে