সর্বশেষ

মতামত

কুষ্টিয়ার উন্নয়নের প্রকৃত রূপকার: শাহ্ আজিজুর রহমান

মনজুর এহসান চৌধুরী 
মনজুর এহসান চৌধুরী 

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫ ৭:০০ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কিছু ব্যক্তিত্ব যুগোপযোগী নেতৃত্ব ও অবদানের কারণে অনন্য উচ্চতায় আসীন।

কুষ্টিয়া জেলার প্রকৃত উন্নয়নের রূপকার হিসেবে যিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয়, তিনি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ্ আজিজুর রহমান। জেনে-বুঝে কুষ্টিয়ার জনপদে যাঁর উন্নয়নমূলক উদ্যোগ ও দৃষ্টান্ত এখনও চিহ্নিত, সেই মানুষটি আজও প্রকৃত মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছেন।

শাহ্ আজিজুর রহমান: এক শিক্ষিত ও সংগ্রামী নেতা
১৯২৫ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার কৈপাল গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহ্ আজিজুর রহমান ছাত্রাবস্থা থেকেই নেতৃত্বগুণ ও সাংগঠনিক দক্ষতায় দ্বীপ্ত ছিলেন। পাকিস্তান আমলে ও পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং ১৯৭৯-১৯৮২ সালে দেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কুষ্টিয়ার উন্নয়নে তাঁর নানাবিধ উদ্যোগ ও কার্যক্রম অমুল্য অবদান রেখে গেছে।

কুষ্টিয়ার আধুনিক অবকাঠামোয় শাহ্ আজিজুর রহমানের ছাপ
শাহ্ আজিজুর রহমান এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপদ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে অগ্রণী ভুমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে কুষ্টিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নের এক নতুন যুগ সূচিত হয়। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ তুলে ধরা হলো।
হোসেনাবাদ ভকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
কুষ্টিয়ার যুবসমাজের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিস্তারে এ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এই প্রতিষ্ঠান দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থান, স্থাপন, ও অবকাঠামো উন্নয়নে শাহ্ আজিজুর রহমানের ভূমিকা কুষ্টিয়ার শিক্ষা-সংস্কৃতির মানউন্নয়নে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনা, একাধিক প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণে তার প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে, আর এটি তাঁর সম্মানে একটি আবাসিক হলের নামকরণেও প্রতিফলিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ,স্বাস্থ্যসেবার বিপ্লব ঘটাতে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে তার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ জরুরি ভূমিকা রেখেছিল, এরশাদ সরকার ক্ষমতায় এসে এই প্রকল্প বাতিল করে।
গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প, কুষ্টিয়ার কৃষি, জনজীবন এবং বসতির রক্ষায় গঙ্গা নদীভাঙন রোধে এ বাঁধ নির্মাণের মতো মেগা প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু সেটা পরবর্তী সরকারগুলো গুরুত্ব দেয়নি।
সড়ক, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্যখাত উন্নয়ন
তাঁর সময়ে কুষ্টিয়ার গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে একাধিক সড়ক, ব্রিজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ হয়, যার সুফল আজও মানুষ ভোগ করছেন। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

ভুল মূল্যায়ন ও ইতিহাস বিকৃতি
দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী, বিশেষত কিছু দুর্নীতিবাজ ও নিজস্ব স্বার্থান্বেষী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে শাহ্ আজিজুর রহমানের অবদান আড়াল করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সাম্প্রতিককালে মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও তার অনুসারীরা নিজেদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে গিয়ে কুষ্টিয়ার উন্নয়নের প্রকৃত রূপকারের নাম মুছে ফেলে নিজেদেরকে বা অন্য কিছু নেতাকে সামনে আনার অপচেষ্টা করেছে। অথচ, জনগণের অসাধারণ স্মৃতি আর ইতিহাস বিকৃতির কোন ষড়যন্ত্রই আটকে রাখতে পারেনি শাহ্ আজিজুর রহমানের অবদান। তারা যাকে ‘রূপকার’ বলছে প্রকৃতপক্ষে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত – কুষ্টিয়ার জনগণ জানেন, এই ভূমিকাকে কোনভাবেই প্রকৃত নেতৃত্ব বলা যায় না।

প্রকৃত রূপকারের স্বীকৃতি জরুরি
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের উর্ধ্বে উঠে কুষ্টিয়ার মানুষ আজও শাহ্ আজিজুর রহমানের কার্যকলাপ ও অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তার সময়েই কুষ্টিয়ায় আধুনিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা পাকা ভিত্তি পেয়েছিল। অক্লান্ত শ্রম, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি এই অঞ্চলের অনগ্রসরতা ও পশ্চাদপদতা দূর করতে পেরেছিলেন।

শেষ কথা
কুষ্টিয়ার বিকশিত উন্নয়ন, অবকাঠামো শক্তি এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির জাগরণে শাহ্ আজিজুর রহমানের নেতৃত্ব ও কার্যক্রম যুগ্মভাবে একটি মাইলফলক। আজ যারা কুষ্টিয়ার রূপকার হিসেবে অন্য কারও প্রসংশা করছেন, তারা আসলে নিজেরা ভুল ইতিহাস ও দলীয় স্বার্থের কারণে আসল মহানায়ককে আড়াল করছেন। তাই নতুন প্রজন্ম ও সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত প্রকৃত ইতিহাস জানার চেষ্টা করা – বুঝে নেওয়া, একজন সত্যান্বেষী, দূরদর্শী এবং নিবেদিতপ্রাণ রূপকার হিসেবে কুষ্টিয়ার উন্নয়নের সত্যিকারের স্থপতি ছিলেন শাহ্ আজিজুর রহমান।
শুধুমাত্র দলীয় রাজনীতির বৈরী প্রবাহে নয়, জনসম্পৃক্ত, ইতিহাসভিত্তিক ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হলেন তিনি।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

১৮২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন