সর্বশেষ

জাতীয়

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ১০ নারী: প্রথম মৃত্যু নাঈমার

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫ ৬:২৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
২০২৪ সালের জুলাই মাস দেশের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায় হয়ে আছে। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে’ জীবন দিয়েছে বহু মানুষ। শহীদদের তালিকায় আছেন ১০ নারীও—যাঁদের মৃত্যু দেশের মানুষের হৃদয় বিদারিত করেছে।

তাঁদের কেউ শিক্ষার্থী, কেউ মা, কেউবা জীবন সংগ্রামে লড়াইরত কর্মজীবী।

শহীদদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী রিয়া গোপ, মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সে। আর সবচেয়ে বেশি বয়সী শহীদ নারী মায়া ইসলাম, যিনি গুলিবিদ্ধ হন নিজের সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে।

নারীদের এই বলিদান স্মরণে আজ ১৪ জুলাই দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই উইমেন্স ডে’।


নাঈমার জন্মদিন আর উদ্‌যাপিত হয় না
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমা সুলতানা (১৪) ছিলেন দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। গুলিবিদ্ধ হন ১৯ জুলাই, নিজ বাসার বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড় আনতে গিয়ে। মৃত্যুর মাত্র পাঁচ দিন পর ছিল তাঁর ১৫তম জন্মদিন।

নাঈমার মা আইনুন নাহার বলেন, “এই মাসটা একই সঙ্গে আমার মেয়েকে পাওয়া ও হারানোর মাস!”

রিয়ার শূন্যতা ঘিরে থমকে গেছে পরিবার
নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটিতে ছাদে খেলার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ৬ বছর বয়সী রিয়া গোপ। বাবা দীপক কুমারের কোলে থাকা অবস্থায় গুলিটি লাগে তার মাথায়। মা বিউটি ঘোষ বলেন,  “তিন বেলা খাই, চলি, ফিরি—কিন্তু ভিতরে কত যন্ত্রণা হয়, সেটা বলা যায় না।”

সন্তানকে আইসক্রিম আনতে গিয়ে প্রাণ দিলেন মা মায়া
ঢাকার মেরাদিয়ায় ছেলেকে আইসক্রিম কিনে দিতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হন মায়া ইসলাম (৬০)। গুলিটি ছেলেও বাসিত খান মুসার মাথা ছুঁয়ে যায়। মা মারা যান পরদিন, আর ছেলে এখনো পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

পুত্র মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের জীবন ওলট–পালট হয়ে গেছে। নতুন সরকার হোক বা পুরোনো, শহীদ পরিবারগুলোর খোঁজ যেন রাখে।”

বারান্দায় মৃত্যু সুমাইয়া আক্তারের
নারায়ণগঞ্জের পাইনাদিতে আকাশে হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন সুমাইয়া আক্তার (২০)। তাঁর কোলে তখন ঘুমিয়ে আছেন আড়াই মাসের কন্যাশিশু। এখন সেই শিশু সোয়াইবা বড় হচ্ছে নানির কাছে।

সুমাইয়ার মা বলেন, “মেয়ে মা বলতে পারে, কিন্তু বুঝে না মায়ের অভাব কী।”

শহরের ছাদে ভাইয়ের সঙ্গে প্রাণ গেল নাছিমার
ঢাকার ধানমন্ডিতে ভাইয়ের সঙ্গে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলেন নোয়াখালী থেকে বেড়াতে আসা নাছিমা আক্তার (২৪)। হঠাৎ গুলিতে ঝরে যায় তাঁর প্রাণ। ভাই আইমান নিজেও গুলিবিদ্ধ হন, আজও তালিকায় তাঁর নাম নেই।


স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, গুলি থামিয়ে দিল রিতার পথচলা
১৭ বছরের রিতা আক্তার মিরপুরে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্য ছিল। গুলিবিদ্ধ হন আন্দোলনের সময় পদচারী–সেতুর সামনে। মা রেহানা বিবি মেয়ের পা দেখে লাশ শনাক্ত করেন।


মেয়ের মৃত্যু জানালার ফাঁক দিয়ে
মিরপুরে জানালা দিয়ে ঢোকা গুলি বিদ্ধ করে শহীদ করে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরুন নেছাকে। বিজয় মিছিল থেকে ফিরে ফোনে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। মা আসমা আক্তার বলেন, “যেখানে কাত হয়ে পড়েছিল, সেখানেই রক্তের দাগ আজও লেগে আছে।”

চিকিৎসা শেষ হয়নি, তালিকায় নামও ওঠেনি
কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ুয়া শিক্ষার্থী আইমান উদ্দিনের শরীরে এখনো গুলির ক্ষতচিহ্ন। অথচ তিনি আহতের তালিকাতেও নেই। এমন অভিযোগ আরও কয়েকটি পরিবারের।


নারীর বলিদান, দেশবাসীর স্মরণে থাকুক

 

শহীদ নারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন, নাঈমা সুলতানা, মায়া ইসলাম, রিয়া গোপ, শাহিনুর বেগম, নাছিমা আক্তার, মেহেরুন নেছা, লিজা আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, নাফিসা হোসেন মারওয়া ও রিতা আক্তার।

তাঁদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থী, দুজন কর্মজীবী, দুজন গৃহবধূ এবং একজন শিশু।

শহীদ পরিবারগুলোর অনুরোধ—আর্থিক সহায়তা নয়, প্রিয়জন হত্যার বিচার ও যথাযথ মর্যাদা চান তাঁরা।

১৩১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন