ভারতের সার্জিকাল স্ট্রাইকে উলফার তিন শীর্ষ নেতা নিহত: মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা

রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫ ৪:২০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে ভারতের সামরিক বাহিনীর কথিত ড্রোন হামলার ঘটনায়।
বিদ্রোহী সংগঠন উলফা-আই (ULFA-I) দাবি করেছে, ১৩ জুলাই ভোররাতে মিয়ানমারের সাগাইন ডিভিশনের হোইয়াত বাসতি ও আশপাশের ক্যাম্পে ভারতের পক্ষ থেকে ১০০-১৫০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। এতে সংগঠনের তিনজন শীর্ষ নেতা—লেফটেন্যান্ট জেনারেল নয়ন আসোম, ব্রিগেডিয়ার গণেশ আসোম ও কর্নেল প্রদীপ আসোম—নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। আহত হয়েছেন অন্তত ১৯ জন সদস্য।
উলফা-আই-এর দাবি অনুযায়ী, হামলার সময় নয়ন আসোমের শেষকৃত্য চলছিল এবং সেই সময়েই দ্বিতীয় দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আরও দুই নেতা নিহত হন। হামলার লক্ষ্য ছিল সংগঠনের ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টারসহ ৭৭৯ ক্যাম্প ও আরও কয়েকটি ঘাঁটি। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি এই হামলার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে “বর্বরোচিত” আচরণের অভিযোগ এনে কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে।
তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তারা এই হামলার খবর অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, সীমান্তে এ ধরনের কোনো অভিযান বা অপারেশনের তথ্য তাদের কাছে নেই। আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকেও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে সহিংসতা ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর উপস্থিতি এই অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ভারত অতীতে যৌথভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী ঘাঁটিতে অভিযান চালালেও, এবারই প্রথম এত বড় ড্রোন হামলার দাবি উঠল। তবে ভারতীয় সেনা ও সরকারের অস্বীকারের কারণে, হামলার প্রকৃত সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বা অন্য কোনো পক্ষের হামলাও হতে পারে।
নিহতদের মরদেহ ফেরত পাঠানোর সময় তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন ও মুখে আঘাতের দাগ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, নজরদারি বৃদ্ধি এবং বিদ্রোহী দমনে ভারতের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। দুই দেশের সরকারই সীমান্তের নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ ও অভিযানের ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন উলফা-আই বা অন্য কোনো সংগঠনের হেডকোয়ার্টারে বড় ধরনের ড্রোন হামলার বিষয়ে ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। তবুও, সীমান্তের ওপারে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থান এবং প্রয়োজনবোধে সীমান্তের ভেতরে অভিযান চালানোর নজির রয়েছে। মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা ভারতের নিরাপত্তা নীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১২১ বার পড়া হয়েছে