ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়াল, বিপদজনক ১০ জেলা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর (২০২৫ সালে) এখন পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৬৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত বছরের (২০২৪ সালের) এই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩১১ জন। অর্থাৎ, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রায় তিনগুণের বেশি বেড়েছে।

ডেঙ্গু সংক্রমণের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বছরের শুরু থেকেই এ রোগের বিস্তার বাড়ছে। জানুয়ারি মাসে আক্রান্ত হন ১,১৬১ জন এবং মারা যান ১০ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হন ৩৭৪ জন, মারা যান তিনজন। মার্চে ৩৩৬ জন আক্রান্ত হলেও কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০১ জনে, মৃত্যুবরণ করেন সাতজন। মে মাসে আক্রান্ত হন ১,৭৭৩ জন এবং মারা যান তিনজন।

সারাদেশে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু, শীর্ষ ১০ জেলায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি
বর্তমানে দেশের ৬১টি জেলায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ১০টি জেলায়, যার মধ্যে পাঁচটি উপকূলীয় এলাকা।

উপকূলীয় পাঁচ জেলা হলো—কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরগুনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী।
অন্য পাঁচটি হলো—ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর ও চাঁদপুর।

দেশজুড়ে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর ৮৭ শতাংশই এই ১০ জেলার মধ্যে ঘটেছে।

উপকূলীয় পাঁচ জেলায় আক্রান্তের হার ৪৫.৭৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ৪১.৪৮ শতাংশ। তবে জয়পুরহাট, চুয়াডাঙ্গা ও সুনামগঞ্জ জেলায় এখনো ডেঙ্গু আক্রান্তের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

গবেষণা বলছে—আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বড় বিস্তার
ডেঙ্গু সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ফোরকাস্টিং মডেল অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুরে ব্যাপক হারে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। কারণ এসব এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।’

তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

জেলার ভিত্তিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর চিত্র
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ঢাকা জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩,১৩৭ জন, মৃত্যু ২৮ জনের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আক্রান্ত ৪৯০ জন, কোনো মৃত্যু হয়নি।
কুমিল্লায় আক্রান্ত ৪৬৫ জন, মৃত্যু দুইজনের।
গাজীপুরে আক্রান্ত ৩২৭ জন, মৃত্যু নেই।
চাঁদপুরে আক্রান্ত ২৭৪ জন, মৃত্যু নেই।
কক্সবাজারে আক্রান্ত ৩৪০ জন, মৃত্যু নেই।
চট্টগ্রামে আক্রান্ত ৫৫২ জন, মৃত্যু দুইজনের।
বরগুনায় আক্রান্ত সর্বোচ্চ ৩,৫৮৭ জন, মৃত্যু ছয়জনের।
বরিশালে আক্রান্ত ১,১৯১ জন, মৃত্যু আটজনের।
পটুয়াখালীতে আক্রান্ত ৭৭০ জন এবং মৃত্যু একজনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনগণকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।