হাত-পা ছাড়াই পরীক্ষা দিয়ে লিতুন জিরা পেল জিপিএ-৫

বৃহস্পতিবার , ১০ জুলাই, ২০২৫ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
যশোরের মণিরামপুরের সাতনল খানপুর গ্রামের অদম্য শিক্ষার্থী লিতুন জিরা আবারও প্রমাণ করলো—শরীর নয়, ইচ্ছাশক্তিই মানুষের প্রকৃত শক্তি।
হাত-পা ছাড়া জন্ম নেওয়া লিতুন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রতিটি বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে ফল প্রকাশের পর থেকেই উচ্ছ্বাসে ভাসছে লিতুনের পরিবার। মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। সাফল্যে আপ্লুত লিতুন জানায়, “আমি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”
লিতুন জিরা শুধু পড়াশোনাতেই নয়, সাংস্কৃতিক চর্চা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেও দ্যুতি ছড়িয়েছে। প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি বৃত্তি পেয়েছে সে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে উপজেলা পর্যায়ে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান এবং জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জন করেছে। এমনকি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল খুলনা বেতারে।
লিতুনের মা জাহানারা বেগম বলেন, “জন্মের পর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কত রাত যে কান্না করেছি! হাত-পা নেই, সে কিছু করতে পারবে কি না, তা ভেবে খুব ভয় পেতাম। কিন্তু আজ সে আমাদের গর্ব।”
বাবা কলেজশিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি যে কলেজে চাকরি করেন, তা এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। তবুও সন্তানদের অভাব বুঝতে দেননি। হুইলচেয়ারে বসা মেয়েকে বৃষ্টিতে ভেজে, কাদা মাড়িয়ে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন তিনি। লিতুনের এই অর্জন তার ত্যাগেরও স্বীকৃতি।
কলেজে ভর্তির পর লিতুনের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তবে অদম্য এই শিক্ষার্থী জানিয়ে দিয়েছে—সে হার মানার জন্য জন্মায়নি। সমাজের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলে একদিন চিকিৎসক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় লিতুন।
১৩০ বার পড়া হয়েছে