বরগুনায় অপারেশনের সময় পেটে ফরসেপ রেখে সেলাই

বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বরগুনার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে জরায়ুর অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর পেটে প্রায় ৭ ইঞ্চি লম্বা ফরসেপ রেখে সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গুরুতর ওই চিকিৎসা ত্রুটির শিকার হয়েছেন কহিনুর বেগম (৭০) নামে এক নারী। সাত মাস পর বরিশালের শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুনরায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পেট থেকে অস্ত্রোপচারের ফরসেপটি বের করা হয়। বর্তমানে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, কহিনুর বেগম পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বাসিন্দা। গত বছর নভেম্বরে তিনি মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে হঠাৎ পেটব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে বরগুনা পৌর শহরের সোনাখালী এলাকায় ‘কুয়েত প্রবাসী হাসপাতাল’ নামক একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে জরায়ুর সমস্যা ধরা পড়লে ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর জরায়ুর অস্ত্রোপচার করা হয়।
অপারেশনটি করেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজ এবং একই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. সাফিয়া পারভীন।
অস্ত্রোপচারের পর থেকেই কহিনুর বেগমের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেওয়া হলেও উন্নতি না হওয়ায় পরে বরিশালের শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার এক্স-রেতে তার তলপেটে একটি কাঁচিসদৃশ বস্তু ধরা পড়ে। ২০২৫ সালের ১৮ জুন অপারেশনের মাধ্যমে সেই বস্তুটি—একটি ফরসেপ—পেট থেকে বের করে আনা হয়।
অপারেশনের জটিলতায় তার মলদ্বার বাদ দিয়ে নতুন একটি রাস্তা তৈরি করা হয়, তাতেও সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তিনি মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন।
ভুক্তভোগীর মেয়ে ফাহিমা বেগম বলেন, "আমার মা এখন মৃত্যুর মুখে। ভুল চিকিৎসায় তার পেটে যন্ত্র রেখেই সেলাই করা হয়েছে, খাদ্যনালীও কেটে ফেলতে হয়েছে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, এই চিকিৎসকদের বিচার চাই।"
মেয়ের জামাই হুমায়ুন জানান, "অপারেশনের পর থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। একবার নয়, দুইবার হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনই ফরসেপের বিষয়টি ধরা পড়ে।"
তবে অভিযুক্ত ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দায় নিতে নারাজ। কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক গাজী (মন্টু) বলেন, "ঘটনা শোনার পর আমি নিজেই রোগীর খোঁজ নিতে বরিশালে গিয়েছিলাম। আমাদের হাসপাতালের যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে কোনো কিছু নিখোঁজ পাওয়া যায়নি। অপারেশন করেছেন ডাক্তার, তাই বিষয়টি তার জানা থাকার কথা।"
এই বিষয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজ ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, "বিষয়টি আমরা জেনেছি। বরগুনার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
১১৬ বার পড়া হয়েছে