সর্বশেষ

আইন-আদালত

সাগর-রুনি হত্যা মামলা: ১১৯ বার পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১১৯ বার পেছানো হয়েছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) তদন্ত কর্মকর্তারা প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান আগামী ১১ আগস্ট নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক এদিন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শুরুতে মামলার তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। এরপর তা হস্তান্তর করা হয় ডিবির কাছে। তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় দুই মাস পর হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি দেওয়া হয় র‌্যাবের হাতে। র‌্যাব ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষা পুনরায় করলেও আসামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হাজিরে ব্যর্থ হয়।

এই মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন— বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল এবং আবু সাঈদ।
তাদের একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

১২ বছরেরও বেশি সময় পার হলেও তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সর্বশেষ ২০২3 সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এক নির্দেশনায় র‌্যাবকে মামলার তদন্ত থেকে সরিয়ে দিয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন চার সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠনের আদেশ দেন।
পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পিবিআই প্রধানকে আহ্বায়ক করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। টাস্কফোর্সকে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হলেও বাস্তবে সেই অগ্রগতি দেখা যায়নি।

হত্যার পেছনের রহস্য আজও অমীমাংসিত। দীর্ঘ তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় জন্ম নেয় নানা গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
সাংবাদিক হারুন উর রশীদের ভাষ্যমতে, “ঘটনার তদন্ত সঠিক পথে না থাকায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়েছিল। প্রভাবশালীদের জড়িত থাকা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক কিংবা বই লেখার বিষয়কে কেন্দ্র করে নানা রটনা চালানো হয়েছে। এমনকি গ্রিল কাটা চোরের নাটক করে তা ভিডিও করেও প্রচার করা হয়।”

এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন দম্পতির তখনকার পাঁচ বছরের ছেলে মেঘ। এখন তিনি ১১ বছর বয়সী।
তার জন্য ন্যায়ের প্রতীক হতে পারতো এই হত্যার বিচার— কিন্তু আজ পরিবারটির আর কোনো প্রত্যাশা নেই।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, “তদন্ত থেমে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে— প্রথমত, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস কেউ করে না। দ্বিতীয়ত, তদন্তে এমন কিছু বেরিয়ে এসেছে যা প্রচলিত ধারণার সঙ্গে যায় না, তাই তা সামনে আনা হচ্ছে না।”

সরকারি কোনো চাপ আছে কি না, এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “সরকার কখনোই তদন্তে বাধা দেয়নি।”

র‌্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৫৩ বার সময় চাওয়া হয়েছে। সর্বশেষ পিবিআই’র তত্ত্বাবধানে থাকা মামলাটির প্রতিবেদনের জন্য আদালতে সময় চাওয়া হয়েছে ১১৯ বার।

তদন্তের এমন ধীরগতি ও রহস্যঘেরা অবস্থান দেশের বিচারপ্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের ১২ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও প্রশ্ন রয়ে গেছে— সাগর-রুনি হত্যার বিচার কি আদৌ হবে?

১২০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আইন-আদালত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন