ইরানে বসবাসরত আফগানদের দেশ ছাড়তে চূড়ান্ত নির্দেশ, গ্রেফতার অভিযান শুরু

সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫ ৪:৫৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইরানে বসবাসরত লাখ লাখ আফগান অভিবাসী ও শরণার্থীকে দেশ ছাড়তে শেষবারের মতো সতর্ক করেছে ইরান সরকার।
রবিবার ছিল স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার শেষ দিন। আজ সোমবার (৭ জুলাই) থেকে 'অবৈধভাবে অবস্থানরত' আফগান নাগরিকদের গ্রেপ্তার করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযান শুরু হয়েছে।
এমন সময় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সামরিক উত্তেজনার পর ইরানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই সংঘাতে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রও।
গত মার্চে ইরান সরকার এক সরকারি আদেশে জানায়, অবৈধ অভিবাসীদের ৬ জুলাইয়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় ইরান ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, এ নির্দেশ জারির পর এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ আফগান ইরান ছেড়েছে। শুধু গত জুন মাসেই ফিরেছে দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, আফগানদের গণহারে ফেরত পাঠানো হলে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও তালেবান শাসন থেকে পালিয়ে আসা বহু আফগান পরিবার ইরানে কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসছে।
তেহরান থেকে আলজাজিরার সংবাদদাতা রেসুল সেরদার জানান, ইরানের চলমান অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক অস্থিরতার জন্য অনেক সময় আফগান অভিবাসীদের দায়ী করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সংঘাতের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন প্রচারণাও চালানো হয়েছে যে, ইসরায়েল আফগানদের গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, যুদ্ধকালীন সময়ে ইরান প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে—যেখানে আগের গড় ছিল দিনে প্রায় দুই হাজার।
তেহরানে বসবাসকারী আফগান রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বতৌল আকবরি আলজাজিরাকে বলেন, “এখন ইরানে ‘অ্যান্টি-আফগান’ মনোভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আমাদের অনেকেই এখানেই জন্মেছি, বড় হয়েছি—এই দেশ আমাদের ঘরের মতো।”
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, “আমরা সব সময় অতিথিপরায়ণ ছিলাম। তবে জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে অবস্থানরতদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।”
বর্তমানে ইরানে আনুমানিক ৪০ লাখ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসী বসবাস করছেন বলে ধারণা করা হয়।
১২৬ বার পড়া হয়েছে