সর্বশেষ

ভিন্নরকম

চট্টগ্রাম মেডিকেলের ছাত্রী মাহা আজ ফিলিস্তিনের রাস্তায় রাস্তায় 

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫ ৬:০০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ফুল স্কলারশিপ পেলেও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও ইসরায়েলি বাধার কারনে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারছেন না গাজার তরুণ চিকিৎসক মাহা শুবেইর।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন ফিলিস্তিনি তরুণী মাহা শুবেইর। দুই বছরের ইন্টার্নশিপ শেষে এখন তিনি একজন দক্ষ চিকিৎসক। তবে অন্য চিকিৎসকদের মতো তাঁর পেশাজীবন শুরু হয়নি। যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমি ফিলিস্তিন তাঁকে গৃহহীন করে দিয়েছে; কেড়ে নিয়েছে পরিবারের একাধিক সদস্যকে। এখন আশ্রয় নিয়েছেন গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকার এক শরণার্থী শিবিরে।

২০২৫ সালের শুরুতে মাহার জীবনে আশার আলো হয়ে আসে বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পূর্ণ বৃত্তি। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সুযোগের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবেও কাজের প্রস্তাব পান তিনি। সব প্রস্তুতি থাকলেও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ইসরায়েলের কড়াকড়ির কারণে তাঁর বাংলাদেশে যাত্রা এখন অনিশ্চিত।

গত ১ জুলাই রাতে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে মাহা জানান, মে মাসে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় তাঁদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর মাওয়াসি খান ইউনিসের সমুদ্রতীরবর্তী এক স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তাঁবুতে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন আটজন পরিবারের সদস্য। আশপাশে আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে।

‘জন্মের পর থেকে আমার বোনের ছেলে কোনো মাংস, ফল বা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেনি। বিদ্যুৎ নেই, বিশুদ্ধ পানিও দুর্লভ। খাবার ফুরিয়ে আসছে, দোকান নেই, বাজারে তেমন কিছু মেলে না’—দীর্ঘশ্বাস ফেলে এমন করুণ চিত্র তুলে ধরেন মাহা।

২০১৭ সালে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন মাহা। শুরুতে বাংলাদেশ ছিল তাঁর কাছে এক অচেনা দেশ। পরে এখানকার সংস্কৃতি, আতিথেয়তা ও মানুষের ফিলিস্তিনপ্রীতি তাঁকে আপন করে নেয়। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশ এখন আমার দ্বিতীয় বাড়ি।”

ফিলিস্তিনে ফেরার পর চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন তিনি। বন্ধু মালিহা মেহজাবিন ও ফয়সাল চৌধুরীর উৎসাহেই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে আবেদন করেন।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক এম এন ইসলাম জানান, “মাহা স্নাতকে ভালো ফলের কারণে ফুল স্কলারশিপ পেয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগও দেওয়া হয়েছে। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ক্লাসে যোগ দিতে পারছেন না।”

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জর্ডান, কাতার ও মরক্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সহযোগিতা চেয়ে ই-মেইল পাঠানো হয়েছে। মাহাও জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিজে ই-মেইল করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।

বাংলাদেশে অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাস থেকেও সহযোগিতা মিলছে না বলে জানা গেছে। অধ্যাপক এম এন ইসলাম বলেন, “অন্তত মানবিক বিবেচনায় হলেও মাহার বাংলাদেশে আসার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করছি।”

ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে চলমান যুদ্ধ এবং ইসরায়েলি অবরোধের ফলে হাজারো তরুণের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থমকে যাচ্ছে। মাহা শুবেইরের গল্প তারই এক বেদনাবিধুর উদাহরণ।

১৩৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
ভিন্নরকম নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন