সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সরিয়ে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতি করার আলোচনা: বাস্তবতা, সংকট ও সম্ভাব্য পথ

শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সরিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাজনৈতিক অঙ্গন ও গণমাধ্যমে বিষয়টি ঘুরেফিরে আসছে, বিশেষত পিনাকী ভট্টাচার্যসহ একাধিক বিশ্লেষক ও অ্যাক্টিভিস্টের সরাসরি প্রস্তাবের পর। তবে এই প্রস্তাবের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বাস্তবতা কী, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক বিতর্ক।
আলোচনার সূত্রপাত ও প্রস্তাবের পটভূমি
সম্প্রতি পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পোস্ট ও ভিডিও বার্তায় সরাসরি বলেছেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি চুপ্পু “হাসিনা সরকারের মনোনীত, বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য”। তিনি দাবি করেন, “জাতীয় ঐক্য ও নিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে খালেদা জিয়ার হাতেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপদ”। তার মতে, নতুন বাংলাদেশ গড়তে খালেদা জিয়া ও নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নির্বাচন হলে সেটি হবে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য।
সাংবিধানিক ও আইনি বাস্তবতা
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি অপসারণ বা পদত্যাগের পর নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হলে সংসদ থাকা আবশ্যক। বর্তমানে সংসদ ও স্পিকার কেউই নেই, ফলে প্রচলিত নিয়মে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বা নিয়োগের কোনো পথ কার্যকর নয়। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিজে পদত্যাগ না করলে তাকে সরানোর কোনো আইনি সুযোগ নেই; অভিসংশনের পথও সংসদ ছাড়া অসম্ভব। ফলে, চুপ্পুকে সরিয়ে নতুন কাউকে রাষ্ট্রপতি করার প্রচলিত কোনো সাংবিধানিক পথ নেই।
রাজনৈতিক ও বাস্তব সংকট
এই সংকটে রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো—রাষ্ট্রপতি পদে শূন্যতা তৈরি হলে বা চুপ্পু পদত্যাগে বাধ্য হলে, দেশের শাসন কাঠামোতে এক ধরনের শূন্যতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। একাধিক বিশ্লেষক মনে করেন, এই শূন্যতা পূরণে জাতীয় ঐকমত্য ও অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া কোনো পথ নেই। অতীতে যেমন ১৯৯০-৯১ সালে রাজনৈতিক সমঝোতায় অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ হয়েছিল, এবারও তেমন ব্যতিক্রমী ও অস্থায়ী ব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প নেই।
খালেদা জিয়ার আইনি যোগ্যতা
বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো আইনি বাধা নেই; সব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রপতি পদে বসতে আইনত সক্ষম। তবে, প্রচলিত সংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার একমাত্র পথ—জাতীয় ঐকমত্য ও বিশেষ নির্বাহী আদেশ বা আদালতের বিশেষ ব্যাখ্যা।
সম্ভাব্য বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া
জাতীয় ঐকমত্য গঠন: অন্তর্বর্তী সরকার, প্রধান রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে খালেদা জিয়াকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা।
জরুরি নির্বাহী আদেশ: আদালতের বিশেষ ব্যাখ্যা বা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী আদেশে অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব প্রদান।
নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ: দ্রুত সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী নিয়মিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, এটাই স্থায়ী সমাধান।
শেষ কথা
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সরিয়ে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতি করার আলোচনা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীকী হলেও, প্রচলিত সংবিধানিক কাঠামোয় তা সম্ভব নয়। একমাত্র পথ হলো—জাতীয় ঐকমত্য, অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থা ও সর্বসম্মত রাজনৈতিক সমঝোতা। অন্যথায়, এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতায় পড়বে, এবং দেশের স্থিতিশীলতা আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৭৯ বার পড়া হয়েছে