সর্বশেষ

আন্তর্জাতিক

বেদুইনরাও পালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের অত্যাচারে

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট

শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ ৮:২০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের লাগাতার হয়রানি, হামলা ও হুমকিতে পশ্চিম তীরের অন্তত ৫০টি ফিলিস্তিনি বেদুইন পরিবার নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এসব পরিবার জেরিকোর উত্তর-পশ্চিমের আরব মলেইহাত এলাকায় বসবাস করছিল।

ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে জোরপূর্বক সেখানকার ৩০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার আরও ২০টি পরিবার একইভাবে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

এই উচ্ছেদের ফলে ওই অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ৫০০ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। বছরব্যাপী কোনো সহায়তা না পেয়েও বেঁচে থাকার সংগ্রামে থাকা এসব পরিবার শেষ পর্যন্ত তাদের তাঁবু গুটিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানান বেদুইন অধিকার সংগঠন আল-বাইদার অর্গানাইজেশন ফর দ্য ডিফেন্স অব বেদুইন রাইটস-এর পরিচালক হাসান মলেইহাত।

তিনি বলেন, “এ হামলা ও হুমকি শুধু বেদুইনদের উচ্ছেদই করছে না, বরং অবৈধ বসতির সম্প্রসারণের পথও সুগম করছে।”

এক বেদুইন নারী, আলিয়া মলেইহাত ওয়াফাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সশস্ত্র ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা তাঁদের বন্দুক দেখিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়। পরে তিনি এবং আশপাশের পরিবারগুলো জেরিকোর দক্ষিণে আকবাত জাবর শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে যান।

একই সম্প্রদায়ের আরেকজন, সাত সন্তানের জনক মাহমুদ মলেইহাত (৫০) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা আর সহ্য করতে পারছিলাম না। বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালায়, আর সেনাবাহিনী তাদেরই নিরাপত্তা দেয়। আমরা অসহায়।”

জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে এসব পরিবার মুআরাজাত এলাকায় টিকে থাকার চেষ্টা করছিল। সেখানে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার একাধিক ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেম। ২০২৪ সালে এক ফিলিস্তিনি স্কুলে হামলার পাশাপাশি আগের বছর ফিলিস্তিনি যাত্রীবাহী গাড়িগুলোর পথ আটকে গুলি ছোড়া ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে।

মাহমুদ বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদ রাখতে চাই। তাই এই অন্যায় সত্ত্বেও এলাকা ছেড়ে যাওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

৪০ বছর ধরে বসবাসরত এই বেদুইন জনগোষ্ঠী এখন জর্ডান উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ পাশের জেরিকো শহরে আশ্রয় নিচ্ছেন।

আলিয়া মলেইহাত বলেন, “যে গ্রামে আমাদের স্বপ্ন গড়ে উঠেছিল, সেই গ্রাম নিজের হাতে ভেঙে চলে যেতে হচ্ছে। এটি এক নতুন ‘নাকবা’-র মতোই।”

‘নাকবা’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ ‘বিপর্যয়’। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাকালে লাখো ফিলিস্তিনির উচ্ছেদকে বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনো এসব উচ্ছেদ ও হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত সোমবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডেওন সার বলেন, “নাগরিকদের যেকোনো ধরনের সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয় এবং কাউকে আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন কার্যক্রম নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এতে বহু ফিলিস্তিনি তাঁদের নিজভূমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছেন। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখলের পর থেকেই ইসরায়েল এ অঞ্চলে সামরিক দখল বজায় রেখেছে।

জাতিসংঘসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিকে অবৈধ ও আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষত জেনেভা কনভেনশন, লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে।

১২২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন