সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জনজীবন, ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ

শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫ ৬:২২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
টানা বৃষ্টি, অপরিকল্পিত খাল-নদী খনন এবং দখলের ফলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সাতক্ষীরা পৌরসভার জলাবদ্ধতা।
শহরের বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, টয়লেট পর্যন্ত এখন ডুবে গেছে পানিতে। পচা ও দূষিত পানির কারণে দেখা দিয়েছে চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগ। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে স্যানিটেশন সংকট। এরই মধ্যে অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী দুই-একদিন এ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। তবে সোমবারের পর থেকে কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
দৈনন্দিন আয়ের উপর নির্ভরশীল নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। বৃষ্টির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষদের খাবার জোটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তারা রয়েছেন দিশেহারা অবস্থায়।
কুখরালী এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন, তৌহিদুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, পৌরসভার কুখরালী উত্তরপাড়ার রাস্তাটি গত এক মাস ধরে পানিতে ডুবে আছে। প্রায় ১০০টি পরিবার তথা ৫০০ জনের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।
তাদের অভিযোগ, শহরের ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, কুখরালী ও বাঁকাল বারুইপাড়া এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য যে বিলটি রয়েছে, সেটির পানি বের হওয়ার পথ স্থানীয় প্রভাবশালীরা আটকে রেখেছে। ফলে বছরে অন্তত চার-পাঁচ মাস এই এলাকায় হাঁটু পানি জমে থাকে।
বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের লেখাপড়া। পানির মধ্যে সাপের ভয়ে অনেক শিশুই আর স্কুলে যেতে পারছে না। চলাচলের রাস্তাগুলো দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকায় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। গোসল, পায়খানা ও খাবার পানি সংগ্রহেও ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পঁচা পানির কারণে চর্মরোগ ও পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। নারী ও শিশুরা রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
জলাবদ্ধতার পেছনে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের অনিয়মকেও দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, নদী ও খাল খননে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও তলদেশ কাটা হয়নি। বরং শুধু পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে, খালের প্রশস্ততা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে বর্ষার পানি নদীতে নামতে না পেরে আশপাশের লোকালয়ে জমে থাকছে। কিছু কিছু সময় নদীর পানি উল্টো লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা দেখা গেছে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত রামচন্দ্রপুর বিল এলাকায়। সেখানে অন্তত ৫০টিরও বেশি বাড়ি ও উঠোনে পানি ঢুকে পড়েছে।
পৌর এলাকার কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলা গণফোরামের সভাপতি আলীনুর খান বাবুল বলেন, “সবার আগে প্রভাবশালীদের দখল থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ জনস্বার্থে মুক্ত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আদি ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের প্রকৃত গভীরতা ও প্রশস্ততা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি জলমহাল ও খাল থেকে অবৈধ দখলদার ও নেট-পাটা উচ্ছেদ করতে হবে। ইজারা বাতিল, পরিবেশবান্ধব জলব্যবস্থাপনা এবং অপরিকল্পিত ঘের নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি অকেজো স্লুইসগেট ও বাঁধ সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।”
১৩২ বার পড়া হয়েছে