কাকন বাহিনী ভিডিও নিয়ে জাকারিয়া পিন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ

বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫ ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গত ৫ জুন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ঘাট ইসলামপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বালু মহাল দখলকে কেন্দ্র করে নাটোরের লালপুরের কাকন বাহিনী সশস্ত্র হামলা চালায়।
ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, যেখানে কাকন বাহিনীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু এবার কাকন বাহিনী এক নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। হামলার ভিডিও ফুটেজের দায় তারা ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর ওপর চাপিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছে।
কয়েকদিন ধরে কিছু বেসরকারি টেলিভিশনে কাকন বাহিনী জাকারিয়া পিন্টুর নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। একইসঙ্গে নাটোরের বাগাতিপাড়ার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটিও একটি ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনসমূহ।
সংবাদ সম্মেলনে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে বলা হয়, গত ৫ জুন আ.লীগ নেতা কাকন ও ছাত্রলীগ নেতা শহিদুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাড়া ঘাট এলাকায় গুলি বর্ষণ, ভাঙচুর, লুটপাট এবং সাধারণ মানুষকে মারধর করে, যা গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রকাশ পায়। এ ঘটনার পর ৭ জুন ঈশ্বরদী থানায় কাকন, শহিদুলসহ ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
এর আগেও গত ২৬ মে একই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা পদ্মার চরে কৃষক দলের ওপর হামলা চালিয়ে ৮ থেকে ১০ জন নিরীহ কৃষককে আহত করে, ফসল নষ্ট ও গরু ছিনিয়ে নিয়ে জবাই করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাড়া ঘাটের খড়িয়া দড়িয়া বালু মহাল ঘাটটি ঈশ্বরদীর স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মেহেদী হাসান ও তার পার্টনাররা সরকারি নিয়ম মেনে বৈধভাবে ইজারা নিয়েছেন এবং রশিদ প্রদান করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কিন্তু কাকন-শহিদুল বাহিনী ওই ঘাট দখল করতে হামলা চালিয়েছে। এখন তারা সেই হামলার দায়ভার উল্টোভাবে জাকারিয়া পিন্টুর নামে চাপাচ্ছে, যেখানে তার কোনও অংশগ্রহণ নেই।
লিখিত বক্তব্যে আরো অভিযোগ করা হয়, সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে ঈশ্বরদী থানা ও নৌ পুলিশ কাকন-শহিদুল বাহিনীর ছয় সদস্যকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু একই ভিডিও দিয়ে কিভাবে জাকারিয়া পিন্টুর নাম যুক্ত করে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। ঈশ্বরদী বিএনপির কিছু সুবিধাবাদী সদস্য কাকন বাহিনীকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, কাকন-শহিদুল বাহিনীর হোতা শহিদুল মোল্লা ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের এজাহারভুক্ত ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও তিনি থানায় গিয়ে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, যা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক।
জাকারিয়া পিন্টু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। পাবনা-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন। ঠিক তখনই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোর কাছে অনুরোধ করেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি সঠিকভাবে অনুসন্ধান করে জনগণের সামনে তুলে ধরার, অন্যথায় তিনি আইনি পথে মানহানি মামলা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দুলাল সরদার, পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ওমর সুমার খান, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান স্বপন, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম হোসেন জুয়েল, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সুলতান আলী বিশ্বাস টনি, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন জুয়েল, সাঁড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আক্কাস আলী খানসহ অনেকে।
অভিযুক্ত শহিদুল মোল্লার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জাকারিয়া পিন্টুর লোকজন তাদের কাছে চাঁদা দাবি করায় মামলা করা হয়েছে। তারা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে ব্যবসা করছে। ভিডিওতে অস্ত্রশস্ত্রসহ তাদের লোকজনই রয়েছে। তিনি নিজে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং মামলা থাকা স্বাভাবিক বিষয় বলে মন্তব্য করেন।
১৪০ বার পড়া হয়েছে