প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক শিপিং মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম

বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫ ৪:৫০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক দেশের তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড)-এর প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিশ্বের শীর্ষ ৩৫টি জাহাজ মালিক দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
তালিকায় ১০২টি পণ্যবাহী মাদার ভ্যাসেল এবং ১৭০টি মাছ ধরার ফিশিং ভ্যাসেল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৫তম।
স্বাধীনতার পর মাত্র দুটি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। বেসরকারি খাতে জাহাজ মালিকানা শুরু হয় ২০১৩ সালে। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে দেশীয় মালিকানায় ১০০টিরও বেশি বড় জাহাজ যুক্ত হওয়া এক বিশাল অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, “এই প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে আমরা শিপ ওনিং কান্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি পেলাম। এটা আমাদের জন্য সম্মানজনক এক মাইলফলক।”
আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজগুলো বিশ্ব সমুদ্র বাণিজ্যের ০.২ শতাংশ অংশ বহন করছে। বছরে প্রায় ৫২ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করছে এ সব জাহাজ। এর বেশিরভাগই পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে গড়ে ওঠা দেশীয় শিপিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান মনে করেন, “এই অর্জন বন্দর ও দেশের জন্য বড় ইতিবাচক সিগনাল। ট্রেড রুট বাড়বে, কার্গো প্রবাহ বাড়বে, বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও শক্তিশালী হবে।”
এই তালিকায় জায়গা পাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশি জাহাজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, যা বিদেশি ব্যবসায়ীদেরও আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে। উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিজস্ব পতাকাবাহী জাহাজগুলোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে বিশেষ বার্থিং সুবিধা চালু রেখেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশি পতাকা–বাহী জাহাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং সুবিধা পাচ্ছে। আরও বেশি জাহাজ এ সুবিধার আওতায় আসবে।”
তবে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ছয়টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ বিদেশি পতাকা ব্যবহার করে চলাচল করছে। এই ধরনের চর্চা রোধ করা গেলে দেশের পতাকার অধীনে থাকা জাহাজের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও আমদানি-রপ্তানি খাতে এর ভূমিকাকে আঙ্কটাডের এ স্বীকৃতি একটি বড় মাইলফলক হিসেবে ধরা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কিছু নীতিগত জটিলতা দূর করতে পারলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ওপরে উঠে আসবে। এমনকি ভবিষ্যতে ২০তম স্থানেও পৌঁছানো সম্ভব।
১৫৭ বার পড়া হয়েছে