৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যেসব দেশে নজিরবিহীন গরম

মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫ ৬:৫২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, গ্রিসসহ একাধিক দেশে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রার তাপ সতর্কতা।
রেকর্ড ভাঙা উচ্চ তাপমাত্রা, দাবানল, স্কুল বন্ধ, জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়া—সব মিলিয়ে গোটা ইউরোপ যেন অস্থির হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সে মঙ্গলবার (১ জুলাই) প্যারিসসহ অন্তত ১৬টি অঞ্চলে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ ‘রেড অ্যালার্ট’। আরও ৬৮টি অঞ্চলে রয়েছে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’। দেশটির জলবায়ু মন্ত্রী এই পরিস্থিতিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলায় ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ২০০টি স্কুল আংশিক কিংবা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। দক্ষিণ কর্বিয়েরেস পর্বতমালায় রোববার কয়েকটি বনে আগুন লাগায় একটি মহাসড়কও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
তীব্র গরমে ইতালির রোম, মিলান, ভেনিস ও সার্ডিনিয়া দ্বীপসহ ২১টি শহরে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুত রেখেছে দেশটি, হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য তাপপ্রবাহজনিত রোগের হার ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইতালির জরুরি স্বাস্থ্য বিভাগের সহ-সভাপতি মারিও গুয়ারিনো।
যুক্তরাজ্যেও দেখা দিয়েছে রেকর্ড তাপমাত্রা। সোমবার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে ৩৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং উইম্বলডনে ৩২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়—যা টেনিস টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ দিন।
স্পেন ও পর্তুগালেও জুন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ উষ্ণতম দিন রেকর্ড হয়েছে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনসহ সাতটি জেলায় জারি রয়েছে রেড অ্যালার্ট।
জার্মানিতে আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপপ্রবাহের কারণে রাইন নদীর পানি হ্রাস পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবহন খরচও বেড়েছে।
বলকান অঞ্চল, তুরস্ক, ক্রোয়েশিয়া, মন্টিনেগ্রো, গ্রিস, সার্বিয়া, বসনিয়া, স্লোভেনিয়া এবং উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার অবস্থা আরও ভয়াবহ। ইজমিরে দাবানলে অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে এবং সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের আশেপাশে দাবানলে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সার্বিয়ায় বুধবার ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন রেকর্ড হয় এবং বৃহস্পতিবার বসনিয়ার সারায়েভোতে তাপমাত্রা ৩৮.৮ ডিগ্রি ছাড়ায়। স্লোভেনিয়া ও উত্তর ম্যাসেডোনিয়ায়ও ভাঙছে রেকর্ড।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুধু মানুষের স্বাস্থ্যে নয়, পরিবেশেও ফেলছে মারাত্মক প্রভাব। এড্রিয়াটিক সাগরে দেখা যাচ্ছে বিষাক্ত ‘লায়নফিশ’ এবং পাহাড়ি অঞ্চলে হিমবাহ দ্রুত গলছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, “তাপপ্রবাহ আমাদের জীবনের অধিকার, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্যানেল সতর্ক করেছে, মানবসৃষ্ট গ্লোবাল ওয়ার্মিং অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও মাত্রা আরও বাড়বে।
যুক্তরাজ্যের রিডিং ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া বিজ্ঞানী রিচার্ড অ্যালান বলেন, “গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত তাপ পৃথিবী থেকে বেরিয়ে যেতে পারছে না। মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন মাঝারি গরমও ভয়াবহ তাপপ্রবাহে রূপ নিচ্ছে।”
১৩৩ বার পড়া হয়েছে