সব বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধী উল্লাস আজ প্রশাসন ক্যাডার

মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫ ৫:০৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের ছেলে উল্লাস পাল সাফল্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেওয়া এই তরুণ নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর আগে ৪৩তম বিসিএসে তিনি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
উল্লাসের এমন অর্জনে খুশি তার পরিবার, শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। সবাই বলছেন, দৃঢ় মনোবল আর কঠোর অধ্যবসায় থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না।
সংগ্রাম শুরু শৈশবেই
উল্লাস পাল জন্মগ্রহণ করেন দুটি হাত ও দুটি পা বাঁকা অবস্থায়। হাঁটাচলার সামর্থ্য ছিল না। পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় চলাফেরা শিখলেও স্বাভাবিক হাঁটা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ভারত গিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আংশিক উন্নতি ঘটে। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও কখনো থেমে যাননি তিনি।
স্কুলজীবন শুরু হয় কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্ষার দিনে কাদা মাখা পথে বাবার কোলে চড়ে স্কুলে যেতে হতো। বাম হাতে লিখতে শিখেছিলেন। খেলাধুলা করতে না পারলেও পড়াশোনায় ছিলেন অসাধারণ।
২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ঢাকার স্বপ্নের কলেজে পড়ার সুযোগ না পেলেও ২০১২ সালে ঢাকা নর্দান কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেন।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে। সেখান থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেন। এরপর শুরু হয় চাকরির প্রস্তুতি। ৪০তম ও ৪১তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েও কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাননি। তবে ৪১তম বিসিএসে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
তবে লক্ষ্য ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়া। অবশেষে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে নড়িয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এরপরও থেমে থাকেননি। প্রশাসন ক্যাডারে প্রবেশই ছিল তার স্বপ্ন। অবশেষে ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে স্থান পেয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করেন।
সাফল্যের অনুভূতি জানাতে গিয়ে উল্লাস পাল বলেন, “রেজাল্টের সময় যখন প্রশাসন ক্যাডারে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা মিলাতে পারলাম, তখন আনন্দে চোখে জল চলে আসে। পরিবারও খুব খুশি। আমি কখনো হাল ছাড়িনি, চেষ্টা চালিয়ে গেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমি চাই সরকার আমাকে যেখানেই দায়িত্ব দিক, সেখানেই যেন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারি। মানুষের পাশে থাকতে চাই, কারণ প্রশাসন ক্যাডার জনকল্যাণে কাজ করার সুযোগ দেয়।”
উল্লাসের মা আন্না রানী পাল বলেন, “ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করেছে। আমরা গর্বিত যে ওর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”
বাবা উত্তম কুমার পাল বলেন, “আমরা কোনো ত্রুটি রাখিনি ছেলেকে মানুষ করতে। আজ ওর সাফল্যে আমরা ধন্য।”
প্রতিবেশী রূপক পাল বলেন, “উল্লাস প্রমাণ করেছে প্রতিবন্ধী হলেই কেউ সমাজের বোঝা নয়। তার সাফল্য আমাদের গর্বিত করেছে।”
কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, “উল্লাস ছাত্র হিসেবে যেমন মেধাবী ছিল, তেমনি দায়িত্বশীলও ছিল। ওর এমন অর্জনে আমরা সবাই খুব খুশি।”
১৮২ বার পড়া হয়েছে