গাজীপুরে চুরির অভিযোগে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫ ৮:১৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে চুরির অপবাদ দিয়ে এক তরুণ শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে মারধরের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। এর জেরে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের পোশাক কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিহত শ্রমিকের নাম হৃদয় (১৯)। তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে। কারখানাটিতে তিনি মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গত শনিবার (২৮ জুন) ভোরে এই ঘটনা ঘটে। পরে হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যেখানে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এরপর রবিবার (২৯ জুন) রাতে পুলিশ কারখানার শ্রমিক হাসান মাহমুদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে।
ঘটনার একটি ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায়—হৃদয়কে কারখানার এক কক্ষে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি খালি গায়ে একটি সোফায় বসে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়, প্যান্টেও রক্তের দাগ স্পষ্ট। আশপাশে থাকা কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়—“এত করে পিটানো হইছে, (তারপরও) কিছুই হয় নাই, মরে নাই।”
ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, কয়েকজন হৃদয়কে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষ থেকে বের করে আনছে। তাঁর হাত পেছনে রশি দিয়ে বাঁধা এবং পা-ও বেঁধে রাখা ছিল। একজনের হাতে কাঠের লাঠিও দেখা যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন বিকেলে হৃদয়ের পরিবার তাঁর খোঁজে কারখানায় গেলে জানতে পারে, চুরির অভিযোগে তাঁকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। শ্রমিকরা এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে হৃদয়ের মরদেহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন বলেন, “মামলার পর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অন্যদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
এদিকে, ঘটনার পর গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। তবে শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘কারখানাটি প্রাথমিকভাবে দুই দিনের জন্য বন্ধ ছিল। আগামীকাল মঙ্গলবার চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কারখানার ডিজিএম কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নিহতের ভাই লিটন মিয়া বলেন, “আমার ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ঘটনাটিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে মরদেহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমরা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
১৩১ বার পড়া হয়েছে