জুলাই সনদ ও নতুন বাংলাদেশ দিবস নিয়ে অনিশ্চয়তা

সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫ ৭:১৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে “জুলাই সনদ” এবং “নতুন বাংলাদেশ দিবস” ঘিরে চলমান অনিশ্চয়তা ও মতবিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার ঐকমত্যের অভাব, জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের উদ্বেগ এবং ৮ আগস্ট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল—সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
জুলাই সনদ: ঐকমত্যের সংকট
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত্তিতে একটি ঐকমত্য দলিল হিসেবে “জুলাই সনদ” ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হওয়া যায়নি। বিশেষ করে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, উচ্চকক্ষের নির্বাচন ও সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা বলছে, শতভাগ ঐকমত্য ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, “কমিশন আশা করেছিল ১৬ জুলাই সবার ঐকমত্যে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা হবে, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হবে কিনা এখনো অনিশ্চিত।” কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যূনতম ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই নির্ভর করছে।
এনসিপির অবস্থান: নিজেরা সনদ ঘোষণা করবে?
নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) “জুলাই সনদ” নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা বলছে, জনগণের অধিকারভিত্তিক নতুন রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং “জুলাই সনদ” বা অনুরূপ দলিলের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, যদি বৃহত্তর ঐক্যমত্য গড়ে না ওঠে, তবে এনসিপি ভবিষ্যতে নিজেরাই “জুলাই সনদ” ঘোষণা করতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
৮ আগস্ট দিবস পালন বাতিল
এদিকে, ৮ আগস্ট “নতুন বাংলাদেশ দিবস” পালন নিয়ে বিতর্ক ও আপত্তির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার দিবসটি বাতিল করেছে। পরিবর্তে ৫ আগস্টকে “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস” এবং ১৬ জুলাইকে “জুলাই শহীদ দিবস” হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ৮ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগস্টকেই নতুন বাংলাদেশের সূচনার দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
সব মিলিয়ে, “জুলাই সনদ” ঘোষণার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্যের ঘাটতি, এনসিপির সম্ভাব্য পৃথক সনদ ঘোষণার ইঙ্গিত এবং ৮ আগস্ট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল—এসব ঘটনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনিশ্চয়তা ও উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহেই পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তার ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি।
সব শেষে
সবচেয়ে বড় কথা, এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সংলাপ, পারস্পরিক সমঝোতা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জরুরি। জুলাই সনদ যদি সর্বদলীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার পথে এক বড় পদক্ষেপ হবে। অন্যথায়, বিভাজন ও অনিশ্চয়তা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ওপর।
সুতরাং, আগামী কয়েক সপ্তাহ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে—এখন সময় ঐক্য, সংলাপ ও দায়িত্বশীলতার।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
১৬৩ বার পড়া হয়েছে