সর্বশেষ

মতামত

বিএনপি'র রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা

ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের নেতৃত্ব, উন্নয়নের প্রত্যাশা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

খাজা মাসুম বিল্লাহ কাওছারী
খাজা মাসুম বিল্লাহ কাওছারী

রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫ ৬:৩৫ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের রাজনীতি যখন একদিকে দুর্বৃত্তায়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনবিচ্ছিন্নতার সংকটে নিমজ্জিত, অন্যদিকে তখনই উদিত হয় নতুন আশার আলো।

এই আশার প্রতীক হয়ে দক্ষিণ বঙ্গের ঝালকাঠির মাটি থেকে জাতীয় রাজনীতির পরিমণ্ডলে দৃশ্যমান হচ্ছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতির পুরনো সংগঠক ড. এসএম জিয়াউদ্দিন হায়দার স্বপন। উন্নয়ন ও জনকল্যাণে তাঁর দীর্ঘ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক সংগ্রামের ঐতিহ্য এবং ব্যক্তিগত নৈতিক দৃঢ়তা নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব: ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার শুধুই একজন রাজনীতিক নন; তিনি মূলত একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়নকর্মী, গবেষক এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর কর্মজীবনের বর্ণাঢ্য অধ্যায়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এবং বিশ্ব ব্যাংকের মতো শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও টেকসই উন্নয়নের খাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁকে বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও উন্নয়নের জটিল বাস্তবতা সম্পর্কে গভীর ধারণা দিয়েছে। পাশাপাশি, এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ তাঁকে উন্নয়নের মাঠপর্যায়ের প্রকৃত অবস্থা ও সাধারণ মানুষের চাহিদা বুঝতে সক্ষম করেছে। এ প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি রাজনৈতিক আলোচনায় অংশগ্রহণ, মতবিনিময় সভা এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর এসব আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনন্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

রাজনৈতিক শিকড় ও ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতা-যাঁর রাজনীতি শেকড় ছুঁয়ে আছে ছাত্র রাজনীতির আদর্শিক আন্দোলনে, তিনি কেবল ক্ষমতার জন্য রাজনীতিতে আসেন না—আসেন পরিবর্তনের জন্য। ড. হায়দার স্বপনের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ছাত্রজীবনে। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা থেকে শুরু করে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এবং শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে তিনি সংগঠনের ভিতকে মজবুত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন।

এমনকি শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী আদর্শে গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ ছিলেন। এই আদর্শিক ভিত্তিই তাঁকে রাজনীতির নীতিহীনতা, দুর্নীতি এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক সংঘাতের বাইরে থেকে রাজনীতি দেখার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

রাজনীতির মঞ্চে প্রত্যাবর্তন: সময়ের দাবি নাকি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত? দেশ যখন দুর্নীতি, স্বৈরতন্ত্র ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বৃত্তে বন্দি, তখন এমন একজন আন্তর্জাতিক মানের পেশাদার, সৎ ও আদর্শনিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিঃসন্দেহে সময়ের দাবি। বিশেষ করে, তাঁর মতো মেধাবী ও বিশ্ব রাজনীতির বাস্তবতা বোঝা নেতৃত্ব রাজনীতির মূলধারায় ফিরলে তা শুধু ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়, বরং জনগণের ন্যায়বিচার, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের প্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনা তৈরি করে।

বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্বের মাধ্যমে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁর অংশগ্রহণ দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ঝালকাঠির রাজনৈতিক বাস্তবতা ও উন্নয়নের সংকট- দক্ষিণ বাংলার ঝালকাঠি জেলা দীর্ঘদিন অবহেলার শিকার। ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খণ্ডিত, অপরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে বারবার স্থবির হয়ে পড়েছে।অথচ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক সংযোগ, মেধা এবং নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্ব। ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ফলে ঝালকাঠির উন্নয়ন প্রশ্নে বাস্তবসম্মত, টেকসই ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাঁর আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা এই অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি: স্থানীয় উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার- বিশ্ব ব্যাংক, FAO ও IAEA-এর মতো সংস্থায় কাজ করার সুবাদে ড. হায়দারের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের জ্ঞান ঝালকাঠির মতো জনস্বাস্থ্য সমস্যাপীড়িত অঞ্চলে অভূতপূর্ব উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
এখানকার শিশুমৃত্যু হার, মাতৃস্বাস্থ্যের দুরবস্থা, পুষ্টিহীনতা এবং স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনগণের জন্য ভোগান্তির কারণ। এসব সমস্যার টেকসই সমাধানে ড. হায়দারের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কার্যকরভাবে কাজে লাগানো গেলে স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তন সম্ভব।

ব্র্যাক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা, যা দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে আসছে। দেশের স্বনামধন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার ব্র্যাকের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ব্র্যাক রিসার্চ অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ডিভিশনের পরিচালক হিসেবে সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পুষ্টি, জনস্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়নে তাঁর গবেষণা ও নীতিগত অবদান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত।

রাজনৈতিক সংস্কারের বাস্তবতা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা- বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের যে ঘোরতর সংকট বর্তমান, তা কাটিয়ে ওঠা সহজ কাজ নয়। ক্ষমতার রাজনীতিতে যাঁরা অবৈধ অর্থ, পেশিশক্তি এবং প্রশাসনিক প্রভাবকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি সহজ নয়। তবে জনগণের প্রত্যাশা ও নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের মতো ব্যক্তিত্বের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা দুর্বৃত্তায়নের প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে। তাঁর মতো দূরদর্শী, আন্তর্জাতিক মানের মেধাসম্পন্ন নেতৃত্ব রাজনীতিকে যদি আবার আদর্শ, দেশপ্রেম ও জনকল্যাণের পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবে রূপ নিতে পারে।

উন্নয়নের রাজনীতি: নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা-বর্তমান প্রজন্ম রাজনীতির নামে দুর্নীতি, অস্থিরতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে বিরক্ত। তাঁরা চাইছেন উন্নয়নকেন্দ্রিক, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং জনমুখী নেতৃত্ব। ড. হায়দার স্বপনের নেতৃত্বের মধ্যে এই প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখা যায়। তাঁর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে যদি ঝালকাঠিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসেবায় দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে, তবে তা সমগ্র দেশের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারে।

নতুন রাজনীতির দিগন্তের হাতছানি-বাংলাদেশের রাজনীতি আজ নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে। পুরনো সংকট কাটিয়ে আদর্শ, নৈতিকতা, মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরির সুযোগ এসেছে। ড. এসএম জিয়াউদ্দিন হায়দারের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অঙ্গীকার নয়, বরং তা গোটা দেশের জন্য নতুন দিগন্তের হাতছানি। ঝালকাঠি তথা সমগ্র দক্ষিণ বাংলার উন্নয়ন এবং দুর্নীতিমুক্ত, গণমুখী রাজনীতির যে প্রত্যাশা জনগণের হৃদয়ে দীর্ঘদিন জমে আছে, তা পূরণে ড. হায়দারের নেতৃত্ব ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ যাত্রা সহজ নয়। দরকার রাজনৈতিক দৃঢ়তা, জনসম্পৃক্ততা এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিত পদক্ষেপ। আমরা প্রত্যাশা করি, ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের মেধা, দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা শুধু ঝালকাঠি নয়, সমগ্র বাংলাদেশকে এক নতুন রাজনীতির পথে এগিয়ে নেবে—যেখানে রাজনীতি হবে জনকল্যাণের শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার, দুর্বৃত্তরা হবে বিতাড়িত, আর নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে মেধা, আদর্শ ও দেশপ্রেম।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক কালের কথা।

১২৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন