আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্তের পাশে শিক্ষক-ছাত্রলীগের অবস্থান

শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫ ৭:২৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সাবেক প্রক্টর ড. শরিফুল ইসলামকে রক্ষায় একজোট হয়েছেন তার বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী, সমন্বয়ক এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এই মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার খবরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ড. শরিফুলের পক্ষে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। এরপর বিকেল ৩টার দিকে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে নামেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ।
সেদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় এই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন আয়োজন করেন, যেখানে শহীদ আবু সাঈদ হত্যার তদন্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তারা দাবি করেন, তদন্তে প্রকৃত দায়ীদের বাদ দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
উক্ত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল ও হলুদ দলভুক্ত শিক্ষকরা—যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলেও পরিচিত। এদের মধ্যে ছিলেন ড. আপেল মাহমুদ, ড. তাবিয়ুর রহমান প্রধান, ড. বিজন মোহন চাকি, ড. কামরুজ্জামান, মো. সিদ্দিকুর রহমান, ড. মাহমুদুল হক এবং আরও অনেকে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ড. শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায় আরোপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষকরা। তাদের দাবি, তদন্তে প্রকৃত নির্দেশদাতাদের চিহ্নিত না করে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ছাত্রলীগের একাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমন্বয়ক, যাদের কেউ কেউ এর আগেও রাজনৈতিক পদক বা পুরস্কার পেয়েছেন, তারাও এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, সাবেক প্রক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরি। তার মতে, কিছু শিক্ষার্থী প্রকৃত বিচারের বদলে একপাক্ষিক অবস্থান নিয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তুহিন রানা জানান, ছাত্রলীগের কিছু নেতা ও কর্মী এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে এবং ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা করছে। তবে আন্দোলনের নামে কোনো ‘মব জাস্টিস’ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক ড. ফেরদৌস রহমান বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, শহীদ আবু সাঈদের হত্যার সঠিক ও নিরপেক্ষ বিচার হওয়া দরকার। তবে বিচার যেন পক্ষপাতদুষ্ট না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হলে কার সম্পৃক্ততা ছিল বা ছিল না, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
১২৬ বার পড়া হয়েছে