ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরো বাড়ার শঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫ ৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বর্ষা মৌসুমে বাড়তে থাকা বৃষ্টিপাত এবং জলাবদ্ধতার কারণে দেশে আবারও মারাত্মকভাবে ফিরে আসছে ডেঙ্গু। জুন মাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের মাসগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি এখনই সমন্বিত উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে জুলাই মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ২২২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। এর মধ্যে শুধু জুন মাসের ২৭ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৮৭৭ জন। একই সময় মারা গেছেন ১৭ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টিপাতের কারণে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বিস্তার বাড়ে। এতে ডেঙ্গুর প্রকোপও বাড়ে। ‘আইইডিসিআর’-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “ডেঙ্গু এখন আর শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই, গত ২৫ বছরে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্মাণ সামগ্রী, পরিত্যক্ত টায়ার, পলিথিন, ও প্লাস্টিক পাত্রে জমে থাকা পানি মশার প্রজননের উপযুক্ত স্থান তৈরি করছে।”
এদিকে, গত ৪৩ দিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকায় মশকনিধন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। ফলাফল হিসেবে ডেঙ্গু আক্রান্তদের অর্ধেকই এখন ঢাকা দক্ষিণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক জরিপে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশেরও বেশি।
মাসভিত্তিক আক্রান্ত ও মৃত্যু:
জানুয়ারি: আক্রান্ত ১১৬১, মৃত্যু ১০
ফেব্রুয়ারি: আক্রান্ত ৩৭৪, মৃত্যু ৩
মার্চ: আক্রান্ত ৩৩৬, মৃত্যু ০
এপ্রিল: আক্রান্ত ৭০১, মৃত্যু ৭
মে: আক্রান্ত ১৭৭৩, মৃত্যু ৩
জুন (২৭ দিন): আক্রান্ত ৪৮৭৭, মৃত্যু ১৭
গতকাল (২৭ জুন) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৯ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে—১০৭ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৪০ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে পুরুষ ২২ জন এবং নারী ১৮ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে ডেঙ্গুর ডেন-৩ সেরোটাইপ বেশি সক্রিয়, যেখানে গত বছর ডেন-২ বেশি সংক্রমণ ঘটিয়েছিল।
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ:
মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ জোরদার করা
নাগরিক সচেতনতা বাড়ানো
নিয়মিত ফগিং ও লার্ভা ধ্বংস কার্যক্রম নিশ্চিত করা
প্রতিটি ওয়ার্ডে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে আলাদা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, “জুনের পর জুলাইয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দ্বিগুণ হতে পারে যদি এখনই মশকনিধনে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।”
১০৬ বার পড়া হয়েছে