সর্বশেষ

মতামত

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ধ্বংসস্তূপ: অন্ধকার কাটছে তেহরানের

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫ ৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
তেহরানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টুডিও, যেখানে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা প্রায় চার দশক ধরে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন, আজ আর অবশিষ্ট নেই। ১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ইসরায়েলি বিমান হামলায় এই স্টুডিও ধ্বংস হয়ে যায়, যা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে।

ঘটনার দিন, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সময় আকস্মিক বিস্ফোরণে স্টুডিওর ভেতর ধোঁয়া ও ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। উপস্থাপিকা সাহার এমামি তখনই সম্প্রচার বন্ধ করে দ্রুত স্টুডিও ত্যাগ করেন। মুহূর্তের মধ্যে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে অন্য স্টুডিও থেকে অনুষ্ঠান চালু করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বিস্ফোরণের পরপরই ভবনটিতে আগুন ধরে যায় এবং আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই হামলার দায় স্বীকার করে বলেন, “ইরানি প্রচারযন্ত্র ও উস্কানির কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।” হামলার আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে ওই এলাকা ছাড়ার জন্য সতর্কবার্তা দেয়, যেখানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, পুলিশ সদর দফতর ও তিনটি প্রধান হাসপাতাল অবস্থিত।

ইরান এই হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পস এই হামলাকে “অমানবিক ও অপরাধমূলক” বলে নিন্দা জানিয়েছে।

হামলার ফলে ইরানের রাজধানীতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়, যদিও ধীরে ধীরে অনেকে ফিরতে শুরু করেছে। শহরে যানজট ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কিছুটা ফিরলেও, বহু মানুষের জন্য এখনো নিরাপদে শ্বাস নেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ ও পানির সংকট, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি আরও প্রকট হয়েছে।

অনেক ইরানি নাগরিক পশ্চিমা বিশ্বের নীরবতায় ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা না করে বরং ইরানকে সন্ত্রাসের মদতদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করছে, যদিও তেহরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে।

হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি নিরাপত্তার কারণে বাঙ্কারে আশ্রয় নেন এবং সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার বয়স ও স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ থাকলেও, এবার তিনি তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেছেন। ইরানের রাজনৈতিক মহলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে।

ধ্বংসপ্রাপ্ত টেলিভিশন স্টুডিওটি আজ ইরানের অন্ধকার সময়ের প্রতীক। সর্বোচ্চ নেতার শাসনের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়। জনসমক্ষে সরকার দৃঢ় অবস্থান নিলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা প্রবল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইরান আরও একঘরে হয়ে পড়েছে, আর দেশের ভেতরে জনগণ লড়ছে বেঁচে থাকার সংগ্রামে।

তেহরানের এই পোড়া স্টুডিও যেন সাক্ষ্য দেয়—ইরান এখন এক নতুন সন্ধিক্ষণে, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট 

৩৯৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(1)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন