লক্ষ্য হিসেবে ইরানের বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডারদের আগেই গোয়েন্দা পরিকল্পনা করে ইসরাইল

বৃহস্পতিবার , ২৬ জুন, ২০২৫ ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
২০২৫ সালের ১৩ জুন ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে এক যুগান্তকারী সামরিক অভিযান চালায়, যেখানে ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সামরিক কমান্ডার ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (IRGC) নেতাদের অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হয়।
এই হামলার পেছনে ছিল বহু বছরের গোয়েন্দা প্রস্তুতি, প্রযুক্তি, এবং ইরানের অভ্যন্তরে গোপন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার দক্ষতা।
কিভাবে টার্গেট নির্ধারণ ও আঘাত
গোয়েন্দা তথ্য ও মানব গোয়েন্দা: মোসাদ বহু বছর ধরে ইরানের ভেতরে স্পাই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। স্থানীয় সহযোগী ও এজেন্টদের মাধ্যমে বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতাদের চলাফেরা, অফিস, বাসস্থান, এমনকি অবসর সময়ের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য AI বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাচাই করে টার্গেট চূড়ান্ত করা হয়।
গোপন অস্ত্র ও ড্রোন মজুদ: হামলার আগেই মোসাদ ইরানের ভেতরে গোপনে বিস্ফোরক ও ড্রোন মজুদ করে রাখে। এসব ড্রোন ও অস্ত্র নির্দিষ্ট সময়ে সক্রিয় করে একযোগে আঘাত হানা হয়, যার ফলে অনেক শীর্ষ বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তা নিজ বাড়ি বা অফিসেই নিহত হন।
প্রিসিশন গাইডেড অস্ত্র ও যানবাহন: মোসাদ গোপনে ইরানের বিভিন্ন শহরে যানবাহনভিত্তিক অস্ত্র ও প্রিসিশন গাইডেড সিস্টেম স্থাপন করে। অপারেশনের সময় এসব যানবাহন থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়, বিশেষ করে সামরিক ঘাঁটি ও ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার।
এয়ার ডিফেন্স নিস্ক্রিয়করণ: হামলার শুরুতেই মোসাদ এজেন্টরা ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও রাডার নিস্ক্রিয় করে দেয়, যাতে ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন সহজেই প্রবেশ করে নির্দিষ্ট টার্গেটে আঘাত করতে পারে।
এআই ও প্রযুক্তি: লক্ষ্যবস্তুর তালিকা চূড়ান্ত করতে এবং হামলার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করা হয়। এতে টার্গেটের অবস্থান, নিরাপত্তা ও চলাফেরার ধরন বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হয়।
নিহত বিজ্ঞানী ও সামরিক নেতাদের তালিকা
বিজ্ঞানী: ফারিদুন আব্বাসি (পারমাণবিক প্রকল্প প্রধান), মোহাম্মদ মাহদি (পদার্থবিজ্ঞানী), মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চি (তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী), সাঈদ বারজি (উপাদান প্রকৌশলী) সহ আরও অনেকে।
সামরিক কমান্ডার ও IRGC: জেনারেল হোসেইন সালামি (IRGC প্রধান), জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি (সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ), মিসাইল প্রোগ্রামের প্রধানসহ অন্তত ২০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
হামলার ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া
এই পরিকল্পিত ও সমন্বিত হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক নেতৃত্ব বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে। ইসরায়েলের এই অভিযানে স্পষ্ট হয়েছে, ইরানের অভ্যন্তরে মোসাদের গভীর নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও গোয়েন্দা দক্ষতা—সব মিলিয়ে তারা অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে বিজ্ঞানী, সামরিক কমান্ডার ও আইআরজিসি নেতাদের টার্গেট করতে সক্ষম হয়েছে।
১০৯ বার পড়া হয়েছে