সর্বশেষ

মতামত

তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরুদ্ধার শুরু করেছে: উদ্বিগ্ন পশ্চিমা শক্তি

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫ ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক যৌথ সামরিক অভিযানে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

হামলার ক্ষয়ক্ষতি ও ইরানের প্রস্তুতি
———————————-
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক হামলায় পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যে ক্ষতি হয়েছে, তার মূল্যায়ন চলছে এবং পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, যাতে উৎপাদন বা সেবায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে”। ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলা তাদের কর্মসূচিকে থামাতে পারবে না।

শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
—————————————
ইরান বারবার দাবি করছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মজিদ তাখত রাভানচি বলেছেন, “ইরান কখনোই পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না। আমরা পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর নির্ভরযোগ্য সদস্য এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি”। তিনি আরও বলেন, “যতক্ষণ আমরা এনপিটির বলয়ের মধ্যে আছি, ততক্ষণ কেউ আমাদের বাড়তি নির্দেশ দিতে পারে না।”

ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
——————————
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের চেষ্টা করছে এবং তাদের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল একাধিকবার জানিয়েছে, তারা ইরানকে কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে দেবে না। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমা নেতারা মনে করেন, ইরান দ্রুত পারমাণবিক বোমা নির্মাণে সক্ষম হতে পারে এবং এটাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।

ইরানের প্রতিক্রিয়া ও আত্মবিশ্বাস
———————————
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, “ইরান কখনোই বাহ্যিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং দেশটির নাগরিকরাও পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উপকার থেকে বঞ্চিত হবে না”। তিনি আরও বলেন, “ইরান কারও নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয় না এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রশ্নে কারও কাছ থেকে অনুমতি নেওয়াকেও প্রয়োজনীয় মনে করে না।” ইরান দাবি করেছে, তাদের পারমাণবিক প্রযুক্তি স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিল্প খাতে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহৃত হবে এবং বাইরের কোনো চাপ এতে প্রভাব ফেলতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও কূটনৈতিক চাপ
——————————
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক হামলা ও পাল্টা ঘোষণার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে এবং ইরান যেন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করে, সে বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) ইরানকে কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগোতে বলেছে।

শেষ কথা
—————-
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান উত্তেজনা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ইরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না এবং শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই কর্মসূচিকে থামাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফলে, কূটনৈতিক সমাধান না হলে অঞ্চলটিতে নতুন করে সংঘাতের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

লেখক: সাংবাদিক,কলামিস্ট 

১৪৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন