সেতু নয়, মরণফাঁদ! সাতক্ষীরায় ভেঙে পড়েছে মরিচ্চাপের ৭ সেতু

মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫ ১:৪৯ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সাতক্ষীরার তিন উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ পড়েছেন অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে। কারণ, মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত সাতটি সেতু একের পর এক ধসে পড়েছে।
কোথাও সেতুর একাংশ ঝুলছে নদীর ওপর, কোথাও আবার সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে বাঁশের সাঁকোই এখন ভরসা।
সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার এই দুরবস্থার পেছনে রয়েছে অব্যবস্থাপনা ও প্রকৌশলগত পরিকল্পনার ঘাটতি। অভিযোগ উঠেছে, সেতু নির্মাণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মতামত না নেওয়ায় এবং পুরোনো সিএস রেকর্ড উপেক্ষা করায় এসব ব্রিজ স্থায়ী না হয়ে অল্প সময়েই পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে।
ধসে পড়া সেতুগুলো:
বাকড়া
টিকেট
হিজলডাঙ্গা
চরগোবিন্দপুর
শিমুলবাড়িয়া
ডাড়ার খাল
এল্লারচর
এই সেতুগুলো ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে।
তবে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খনন কার্যক্রমে নদী ফিরে পায় তার পুরোনো রূপ প্রস্থ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫০-৭০ মিটার পর্যন্ত। ফলে নদীর স্রোত ও পানির চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে এসব অপরিকল্পিত ছোট সেতুর ওপর ধসে পড়ে একের পর এক।
স্থানীয়দের দুর্ভোগের চিত্র:
চরগোবিন্দপুরের শুকুর আলী সরদার বলেন, “সেতুগুলো নির্মাণের সময় নদী ছিল প্রায় শুকনো। এখন স্রোতের তোড়ে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে পড়ছে।”
এল্লারচরের রফিকুল ইসলাম জানান, “সেতুটি ছিল সাতক্ষীরা মেডিকেলে যাওয়া-আসার সহজ পথ। এখন বিকল্প পথে ঘুরে যেতে হয়, রোগী নিয়ে সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না।”
ডাড়ার খাল এলাকার মিজানুর রহমান বললেন, “আমাদের মাছ বাজারে নিতে খুব কষ্ট হয়। শিক্ষার্থীরাও স্কুল-কলেজে সময়মতো পৌঁছাতে পারছে না।”
এক সময় ৪-১০ কিলোমিটারের পথ এখন ঘুরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ কিলোমিটারের বেশি। এতে সময় যেমন বেড়েছে, তেমনি খরচও বহুগুণ।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য:
পাউবো’র উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান বলেন, “নদীর ওপর নির্মাণকাজ করতে হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি নিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। তাই খননের পর নদীর স্বাভাবিক গতি ছোট সেতুগুলোর ভার সহ্য করতে পারেনি।”
উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হিসেবে টিকে আছে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের এলজিইডি নির্মিত একটি সেতু, যা বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ২০২২ সালে নির্মিত হয়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম জানান, ভেঙে পড়া সেতুগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোয়েব আহমেদ বলেন, “সাতটি ধসে পড়া সেতুর মধ্যে চারটি পুনর্নির্মাণের জন্য এলজিইডির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”
১২৮ বার পড়া হয়েছে