সর্বশেষ

সারাদেশ

ভাঙ্গুড়ায় নৈশপ্রহরী হত্যা সন্দেহে ৭ পরিবার নিঃস্ব, খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন

পাবনা প্রতিনিধি
পাবনা প্রতিনিধি

মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫ ৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় নৈশপ্রহরী হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে সাতটি পরিবারের ওপর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ঘটনার পর ওসমান গণি হত্যায় প্রকৃত দুই কিশোর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও নির্দোষ পরিবারগুলোর ক্ষতি পূরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।


বর্বর হামলায় পুড়ে ছাই ১০টি ঘর
ঘটনাটি ঘটে ভাঙ্গুড়ার খানমরিচ ইউনিয়নের বৃদ্ধ মরিচ গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৯ জুন রাতে চন্ডিপুর সিকেবি আলিম মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী ও মসজিদের মুয়াজ্জিন ওসমান গণি মোল্লা (৬২) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালেই সন্দেহভাজন হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দা শাহাদত হোসেনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে গ্রাম্য প্রধানরা।


এরপরই গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে উত্তেজিত জনতা হামলা চালায় শাহাদতের বসতবাড়িতে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সাতটি পরিবারের ১০টি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন লাগানো হয়। ঘরের আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, চাল-চাউল, গবাদি পশু সব লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা।


আসল হত্যাকারী দুই কিশোর, সন্দেহভাজন মুক্ত
পরবর্তীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে দুই কিশোর—হাবিব (১৪) ও আহমদ উল্লাহ (১৫) কে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, মাদকের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে তারা ওসমান গণিকে হত্যা করেছে। এরপর সন্দেহভাজন শাহাদতকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, ঘটনায় তাদের প্রায় এক কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। প্রবাসী, কৃষক ও নিম্ন আয়ের এসব পরিবারের সদস্যরা এখন ঘরহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।


রবিউল করিম, নুরুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, আব্দুস সোবাহান, সাদ্দাম হোসেন, শাহাদত হোসেন ও লাইলী খাতুন—এই সাত পরিবারের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে তিনজন বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসে রয়েছেন।


মামলা ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
ঘটনার পর রবিউল করিম বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সাইদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন ও শাহীন হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিরা গ্রেপ্তার হয়েছে এবং ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মামলাতেও কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


সামান্য সহযোগিতা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ নাজমুন নাহার জানান, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবার, এক বাণ্ডিল করে টিন ও ছয় হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছরে আরও সহযোগিতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বর্তমানে তারা আশপাশের মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছেন। কেউ কিছু দিলে খাচ্ছেন, না দিলে উপোসে থাকতে হচ্ছে।


সহযোগিতার আবেদন
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কাছে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন। তারা জানায়, এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে তারা একাই সক্ষম নয়।

সহযোগিতা পাঠাতে চাইলে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে রবিউল করিমের মোবাইল নম্বর: ০১৭৩৬-৬৭৭২১০ ।

৩২৭ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন