রাজধানীতে আন্দোলনের লাগাতার ঢল, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫ ৪:১৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢাকার রাজপথে টানা আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে সাধারণ মানুষ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালসহ সবখাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নগরজুড়ে আন্দোলনের মাত্রা ও পরিধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক, চাকরিচ্যুত বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চাকরিপ্রার্থী ও রাজনৈতিক দলীয় সমর্থকদের একাধিক কর্মসূচির কারণে ঢাকায় ভয়াবহ যানজট, প্রশাসনিক অচলাবস্থা এবং নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটে।
শ্রম ভবনের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ
বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নেয় গাজীপুরের ‘সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড’-এর কয়েকশ শ্রমিক। ভবনের ফটক ও আশপাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা মালিক পক্ষকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের দাবি, পাওনা পরিশোধে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা সেখানেই থাকবেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা শফিউল আলম জানান, মালিকপক্ষের একাংশ এখনও অবরুদ্ধ। দাবি পূরণে আশ্বাস না পেলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন তিনি।
সচিবালয়ে কর্মবিরতি, ‘কালো আইন’ বাতিলের দাবি
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ আন্দোলন এক মাসে গড়িয়েছে। আন্দোলনকারীরা অধ্যাদেশকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) তারা গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবেন।
পদযাত্রায় রুখে দেওয়া হলো চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের
তিন দফা দাবিতে জাতীয় শহীদ মিনার থেকে যমুনা ভবনের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের স্বজনরা। তবে শাহবাগে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ আটকে দেয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার পুনর্বিবেচনা, নিরপরাধ বন্দিদের মুক্তি এবং চাকরিচ্যুত সদস্যদের ক্ষতিপূরণ।
‘ফেল’ প্রার্থীদের উত্তীর্ণ ঘোষণার দাবিতে অবস্থান
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ‘অনুত্তীর্ণ’ প্রার্থীরা উত্তীর্ণ ঘোষণা ও ই-সনদ প্রদানের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করা হয় বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। এর আগে রোববার তাদের অবস্থান কর্মসূচি ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ।
ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে একমাস পর খুলল নগর ভবন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা এক মাসের বেশি সময় ধরে তালা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এতে ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। এছাড়া উন্নয়ন কাজ থেমে থাকায় জলাবদ্ধতা ও মশার উপদ্রব বেড়েছে।
তবে সোমবার সকালে নগর ভবনের তালা খুলে দেন আন্দোলনকারীরা। খুলে দেওয়া হয় সব দপ্তরের তালাও। তবে এখনও প্রশাসকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, মশক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম আন্দোলনের মধ্যেও অব্যাহত ছিল।
রাজধানীতে এই টানা আন্দোলন-অবরোধ জনজীবনে যে চাপ সৃষ্টি করছে, তা এখন নানামুখী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অবিলম্বে সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
১১৯ বার পড়া হয়েছে