সর্বশেষ

সারাদেশ

নওগাঁয় ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি, বিপাকে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা

মামুনুুর রশিদ বাবু, নওগাঁ
মামুনুুর রশিদ বাবু, নওগাঁ

রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
দেশের অন্যতম ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় হঠাৎ করেই চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।

বোরো মৌসুমে যেখানে চালের দাম কমার কথা, সেখানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষজন।

পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি জিরাশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা, কাটারি ৭০-৭২, শুভলতা ৬০-৬২, ব্রি আর-২৮ চাল ৬২-৬৪ এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৫-৫৬ টাকায়। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এই চালগুলো বিক্রি হচ্ছিল যথাক্রমে ৬৪-৬৬, ৬৬-৬৮, ৫৭-৫৮, ৫৯-৬০ এবং ৫৩-৫৪ টাকা দরে।

অপরদিকে খুচরা বাজারেও দামের উর্ধ্বগতি স্পষ্ট। নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে এখন জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২, কাটারি ৭৫-৮০, শুভলতা ৬২-৬৪, ব্রি আর-২৮ চাল ৬৫-৬৬ এবং স্বর্ণা-৫ চাল ৫৮-৬০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এই চালগুলোর দাম ছিল ৬৫-৬৬, ৭০-৭২, ৫৭-৫৮, ৫৯-৬০ এবং ৫২-৫৪ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ৫-৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির পেছনে 'সিন্ডিকেট' ও 'মজুত'
চালের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে নানা কারণ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকে মনে করছেন, মিলার ও বড় ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ এবং বাজারে সরকারি নজরদারির অভাবের কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, “ভরা মৌসুমেও বড় বড় ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ধান কিনে মজুত করে রাখছে। এটাই সিন্ডিকেট। আগে দিনে তিন-চারটি গাড়ি চাল নিতাম, এখন ২০ বস্তাও পাচ্ছি না। ছোট ব্যবসায়ীরা মিলারদের সাথে টিকতে পারছে না।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে যথেষ্ট ধান আছে। এক বছরের চাল জোগান দেয়ার মত মজুত রয়েছে। কিন্তু সরকারের নজরদারি না থাকায় বড় ব্যবসায়ীরা মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।”

এদিকে মেসার্স তাপস খাদ্য ভান্ডারের প্রোপাইটার তাপস কুমার মন্ডল জানান, “চাহিদা দিলে মিল থেকে ২০ বস্তার জায়গায় ৫-৭ বস্তা চাল দিচ্ছে। তাও প্রতি বস্তায় ২০০-৪০০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।”

পাইকারি ব্যবসায়ীর অভিমত
আড়তদার পট্টির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সততা রাইস এজেন্সির সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, “এবার বোরো মৌসুমে বাজারে ধান আসতেই করপোরেট ব্যবসায়ীরা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে নিয়েছে। মিলারদের হাতে ধান নেই। এতে করে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে।”

মিল মালিকদের বক্তব্য
জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, “সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হচ্ছে। এজন্য কিছুটা দাম বেড়েছে। তবে ব্র্যান্ডিং কোম্পানিগুলো ৬-৭ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আমরা চাই বাজারে স্বস্তি ফিরুক। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান জরুরি।”

প্রশাসনের পদক্ষেপ
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, “চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে খাদ্য কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। তদন্তে যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে অবশ্যই অভিযানে নামব।”


বাজারে অনিয়ম, মিশ্রিত চালের বিস্তার
বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের ধান ও চাল সর্টারে মিশিয়ে বিক্রির ফলে মানসম্পন্ন চাল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। দিনাজপুরের কাটারির সুবাসিত চালের তুলনায় বর্তমানে বাজারে যেসব কাটারি চাল পাওয়া যাচ্ছে, তা মিশ্র এবং নিম্নমানের। ফলে ভোক্তারা যেমন ঠকছেন, তেমনি খুচরা ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে।

এছাড়া ভারতীয় গুটি চাল ৫০ টাকায় ফ্রি সেলে পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো স্বর্ণা চালের সঙ্গে মিশিয়ে অনেকেই কম দামে চাল বিক্রি করছেন। এতে ভোক্তারা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি বাজারেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

নওগাঁয় চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি শুধু বাজারের স্বাভাবিক চাহিদা-জোগান সমস্যার ফল নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে মিলার ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেট, মজুতদারি এবং প্রশাসনিক নজরদারির অভাব। এ অবস্থায় সাধারণ ভোক্তারা যেমন চরম বিপাকে পড়েছেন, তেমনি চাপে পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরাও। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে প্রয়োজন দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও কঠোর অভিযান।

১২২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন