তেহরানে ইন্টারনেট ও ফোন কলের বর্তমান বিভ্রাটকর পরিস্থিতি

শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫ ১২:০১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইরান-ইসরায়েল চলমান উত্তেজনার মধ্যে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ব্রিটিশ-ইরানীয় নারী এলি।
তেহরানে থাকা মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি ফোনে এক রহস্যময় রোবট কণ্ঠ শুনেছেন।
৪৪ বছর বয়সী এলি জানান, সম্প্রতি তিনি মায়ের অবস্থার খোঁজ নিতে তেহরানে ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে একজন নারীকণ্ঠ ভেসে আসে—‘‘হ্যালো? কে ফোন করছেন? আমি আলিসিয়া। আপনি কি আমাকে চেনেন?’’
এলির ভাষ্য, “আমি হতবাক হয়ে যাই। আমি তো মাকে ফোন করেছি, কিন্তু এক যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর উত্তর দিচ্ছে। বুঝতেই পারছিলাম না কী ঘটছে।”
এলি একা নন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী আরও অন্তত নয়জন ইরানি একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলের সামরিক হামলার পর থেকে দেশে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই তারা রহস্যময় রোবট বার্তার মুখোমুখি হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বার্তাগুলো হয়তো কম মানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি, কিংবা এটি আগে থেকে রেকর্ড করা কোনো মেসেজ। যদিও এখনো নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছে না, এসব বার্তার উৎস কী এবং কারা এর পেছনে আছে।
বিশ্লেষকদের মধ্যে চারজন মনে করছেন, এটি ইরান সরকারের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তারের একটি পন্থা হতে পারে। অপর একজন অবশ্য বলছেন, এটি ইসরায়েলের ‘সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’-এর (মানসিক যুদ্ধে ব্যবহৃত কৌশল) অংশও হতে পারে।
এদিকে ইরান সরকার সাময়িকভাবে দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে। এতে করে বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা ভেতরে থাকা আপনজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
এলি জানান, তার মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ইনসুলিন শেষ হওয়ার পথে। তিনি মাকে তেহরান ছাড়ার পরামর্শ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু যোগাযোগ করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরে সীমান্তবর্তী এক পরিচিত ব্যক্তির সহযোগিতায় তুর্কি নম্বরের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।
এলির মা বলেন, “ফোনই তো বাজেনি,” যা পুরো ঘটনার রহস্য আরও ঘনীভূত করেছে।
নিউইয়র্কে অবস্থানরত এক তরুণী বলেন, “মাকে ফোন করে এমন কণ্ঠ শুনতে হলে সেটি খুবই ভয়ের।” অন্য এক ব্যক্তি জানান, তিনি শুনেছেন রোবট কণ্ঠ বলছে, “চোখ বন্ধ করো, ভাবো তুমি জঙ্গলে হাঁটছো, পাখির ডাক শুনছো, ঢেউয়ের শব্দ শুনছো।”
এ ধরনের বার্তা প্রবাসী ইরানিদের মনে আরও উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, অতীতে—বিশেষ করে ১৯৮০-এর দশকে—ইরান সরকার যুদ্ধকালে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়েছে। তবে বর্তমান এই কণ্ঠের উৎস ও উদ্দেশ্য ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্বেগ।
১১৭ বার পড়া হয়েছে