যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের কর্মী মাহমুদ খলিল

শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫ ৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের কর্মী মাহমুদ খলিল লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্র থেকে গতকাল (২০ জুন) মুক্তি পেয়েছেন।
এক অভিবাসন আদালতের আদেশে তিনি তিন মাস পর মুক্তি লাভ করেন।
খলিলকে গত ৮ মার্চ নিউইয়র্কে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের লবি থেকে আটক করেছিল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ছিল, তিনি মার্কিন অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাঁর ভিসার তথ্যে অসঙ্গতি রয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই বলছিল, খলিলকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে টার্গেট করা হয়েছে, যা বেআইনি।
মুক্তির পর সাংবাদিকদের সামনে খলিল বলেন, “ন্যায়বিচার শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে, তবে তা অত্যন্ত দেরিতে। এই ঘটনার এতটা দীর্ঘ সময় লাগার কথা ছিল না।” তিনি জানান, আটক অবস্থায় তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের জন্ম হয়েছে, যাকে তিনি এবার প্রথমবারের মতো কোলে নিতে পারবেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, খলিল জনসাধারণের জন্য কোনো হুমকি নন এবং তাঁর বিরুদ্ধে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার মতো কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং তাঁকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে অভিবাসন আইনকে অপব্যবহার করা হয়েছে বলে পর্যাপ্ত ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনগুলোকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, এসব আন্দোলনে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে। খলিল ছিলেন সেই নীতির প্রথম বাস্তব শিকার।
লুইজিয়ানার অভিবাসন আদালত যদিও তাঁর আশ্রয় আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন, তবু নিউ জার্সির বিচারক ফারবিয়ার্জ তাঁর বহিষ্কারের আদেশ আপাতত স্থগিত রেখেছেন। এর ফলে তাঁর মুক্তি সম্ভব হয়েছে। বিচারক বলেন, খলিলের আটক থাকার বৈধতা নিয়ে গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্ন রয়েছে।
খলিলের আইনজীবীরা জানান, সাধারণত অভিবাসন ফর্মে তথ্য গোপনের মতো অভিযোগে কাউকে এতদিন ধরে আটক রাখা হয় না। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং তিনি নিজেও স্থায়ী বাসিন্দা।
মুক্তির সময় খলিল ‘কেফিয়েহ’ পরে হাতে মুষ্টিবদ্ধ প্রতীক তুলে বলেন, “এখানে শত শত মানুষ বন্দি আছেন, যাঁরা আসলে কোনো অপরাধ করেননি। কোনো মানুষ অবৈধ নয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থাকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস এই আদেশের সমালোচনা করে জানায়, খলিলকে মুক্তি দেওয়া অবৈধ এবং তাঁকে বহিষ্কার করা উচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন এ বিষয়ে আপিল করবে বলেও জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় মাহমুদ খলিল শুধু একজন রাজনৈতিক বন্দিই নন, বরং মার্কিন অভিবাসন নীতির বিচার এবং মানবাধিকারের প্রশ্নেও এক নতুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।
১২৮ বার পড়া হয়েছে