বৈশ্বিক মিডিয়ায় বৈষম্য: ইরানের হাসপাতালে ইসরাইল আগে হামলা করলেও খবর নেই!

গত ১৬ জুন সোমবার সকালে ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ শহরের ফারাবি হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরানি সংবাদমাধ্যম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও যন্ত্রপাতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জানালা ভেঙে যায়, এবং বহু রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মী আহত হন। ইরান এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও চিকিৎসা নিরপেক্ষতার চরম লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দেয়। তবে ইসরায়েল দাবি করে, তাদের লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের পাশের সামরিক স্থাপনা, হাসপাতাল নয়।

এর মাত্র তিন দিন পর, ১৯ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ইরান পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেয়ার শেভা শহরের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। হামলায় হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ড সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়, অন্তত ৭১-৮০ জন আহত হন এবং হাসপাতালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণের পর হাসপাতালটি নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয় এবং শত শত রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এই হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” ও “রেড লাইন অতিক্রম” হিসেবে আখ্যা দেয়।

বিশ্ব মিডিয়ার প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইরানের ফারাবি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পেয়েছে। এর প্রধান কারণ ছিল ভূরাজনৈতিক পক্ষপাত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক অবস্থানও এখানে ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালে হামলার পরপরই দেশটির সরকার আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়, প্রেস কনফারেন্স করে এবং দ্রুত ভিডিও-ছবি ছড়িয়ে দেয়, ফলে বিশ্বব্যাপী তাৎক্ষণিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

অন‍্যদিকে ইসরাইল গাজায় প্রায় ৩৫টি হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টারে হামলা করে সম্পূর্ণ ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেখানে মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে।

এই দুই হামলা যুদ্ধের নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও বৈশ্বিক মিডিয়া কাভারেজের বৈষম্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো উভয় হামলাকেই যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে, তবে মিডিয়া কাভারেজে স্পষ্ট বৈষম্য থেকেই গেছে।