ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে সাইবার যুদ্ধের নতুন অধ্যায়

শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫ ৯:০২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সামরিক সংঘাতের পাশাপাশি আরেকটি অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে—সাইবার পরিসরে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সাইবার হামলা, তথ্য চুরি, অবকাঠামোতে নাশকতা এবং ডিজিটাল বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঘটনা নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে।
১৩ জুন ইসরায়েলের “Operation Rising Lion” নামে ইরানে বড় ধরনের সামরিক হামলার পর, ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে সাইবার আক্রমণ প্রায় ৭০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা র্যাডওয়্যার।
ইরানপন্থী হ্যাকার গ্রুপ ‘হান্ডালা’ ইসরায়েলের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়ে গ্রাহকদের কাছে ভুয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। তারা ইসরায়েলি হোম ফ্রন্ট কমান্ডের ছদ্মবেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং দেশের বৃহত্তম জ্বালানি ও নির্মাণ সংস্থা থেকে দুই টেরাবাইটের বেশি তথ্য চুরি করেছে।
এই হামলাগুলো শুধু ওয়েবসাইট হ্যাকিং বা ডিডিওএস (DDoS) আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা হয়েছে। ফলে শুধু প্রযুক্তিগত ক্ষতিই নয়, জনমনে আতঙ্কও ছড়িয়েছে।
অপরদিকে ইসরায়েল-সমর্থিত ‘Predatory Sparrow’ হ্যাকার গ্রুপ ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ Nobitex-এ হামলা চালিয়ে প্রায় ৯ কোটি ডলারের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চুরি করেছে। একইসঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক Sepah-এর তথ্য ধ্বংস এবং ওয়েবসাইট অফলাইনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি স্টেশনও হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে, যেখানে সরকারবিরোধী বার্তা সম্প্রচার করা হয়েছে। এসব হামলার কারণে ইরান সরকার দেশের ভেতরে ইন্টারনেট আংশিকভাবে বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করছে, যাতে তথ্য ফাঁস ও বিদেশি হ্যাকিং প্রতিরোধ করা যায়।
উভয় দেশই সাইবার আক্রমণকে প্রতিশোধ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ইরানে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি এবং হোয়াটসঅ্যাপ-ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইসরায়েলে ম্যালওয়্যার ও বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই সাইবার যুদ্ধ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৭ সালের স্টাক্সনেট হামলার পর থেকে ইরান তাদের সাইবার সক্ষমতা বাড়িয়েছে, এবং এখন দুই দেশই জাতীয় অবকাঠামো, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ও জনগণের ওপর সাইবার হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে।
এই যুদ্ধ শুধু প্রযুক্তির লড়াই নয়—তথ্য, ভয়, বিভ্রান্তি ও মনস্তাত্ত্বিক চাপেরও লড়াই।
১০৯ বার পড়া হয়েছে