১ সপ্তাহের ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: তুলনামূলক ক্ষয়ক্ষতি

শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫ ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গত ১৩ জুন ২০২৫ থেকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
ইসরায়েলের আকস্মিক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে এই সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে, যেখানে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা এবং শীর্ষ বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এই যুদ্ধ দুই দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রাণহানি, অবকাঠামো ধ্বংস এবং আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর উদ্বেগ—সব মিলিয়ে এই যুদ্ধ এখন বৈশ্বিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।
ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানে অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ১,৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র, গ্যাসক্ষেত্র, তেল পরিশোধনাগার, সম্প্রচারমাধ্যম, বিমানবন্দরসহ বহু সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা ধ্বংস করেছে এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত এবং ৮০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।৩,৮০০ জনেরও বেশি মানুষকে বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
ইরানের ৪০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও শত শত ড্রোন হামলায় ইসরায়েলের ৪০টি স্থানে আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে বীরশেবা শহরের একটি হাসপাতাল ও বেশ কিছু আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ১৯,০০০টি ক্ষতির দাবি জমা পড়েছে।
ইরানের হামলায় মূলত বেসামরিক স্থাপনা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সামরিক স্থাপনার ক্ষতি তুলনামূলক কম।
ইরান একাধিক ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে, যার মধ্যে হার্মেস ৯০০ ড্রোন এবং কয়েকটি F-35 যুদ্ধবিমানও রয়েছে। তবে এসব দাবির মধ্যে কিছু ইসরায়েল স্বীকার করেছে, আবার কিছু দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক রয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানে মানবিক ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে বেসামরিক ক্ষতি ও আতঙ্ক ছড়ালেও, সামরিক দিক থেকে ক্ষতি তুলনামূলক কম। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রেখেছে, তবে ইসরায়েলের বিমান হামলা ইরানের সামরিক সক্ষমতায় বড় ধরনের আঘাত করেছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
উভয় পক্ষই আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে—ইরান হাইপারসনিক ও ব্যারেজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, আর ইসরায়েল গভীরতর বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পরমাণু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এতে দুই দেশের মধ্যে হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি ক্রমাগত বাড়ছে।
এই সংঘাতের শেষ কোথায় তা এখনো অনিশ্চিত। তবে স্পষ্ট, যুদ্ধের ফলে শুধু ইরান ও ইসরায়েল নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য নতুন নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
১৯৫ বার পড়া হয়েছে