প্রযুক্তি বনাম সংখ্যা: ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধ সক্ষমতা

শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫ ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত এখন সরাসরি সামরিক লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।
সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও কৌশলের দিক থেকে দুই দেশের অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান তার বিশাল সেনাবাহিনী, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সক্ষমতার কারণে আঞ্চলিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। দেশটির সক্রিয় ও রিজার্ভ মিলিয়ে কয়েক লাখ সেনা রয়েছে এবং নৌবাহিনী ও সাবমেরিনের সংখ্যায়ও ইরান এগিয়ে। ইরানের কাছে অন্তত ১২ ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটির পাল্লা দুই হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। পাশাপাশি, ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি বাভার-৩৭৩, রাশিয়ার এস-৩০০ ও খোরদাদ-১৫সহ উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে। দেশটি বছরে প্রতিরক্ষায় ইরানের তুলনায় তিনগুণ বেশি ব্যয় করে এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান, গোয়েন্দা সরঞ্জাম ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্বের শীর্ষে। ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিড’স স্লিং’ ও ‘অ্যারো সিস্টেম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় বিশেষভাবে কার্যকর, যা ইরানি হামলার বেশিরভাগই প্রতিহত করতে সক্ষম হচ্ছে। ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আধুনিক যুদ্ধবিমান ও প্রযুক্তি তাদের আকাশে আধিপত্য বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
তবে সাম্প্রতিক হামলা-পাল্টা হামলায় দেখা গেছে, ইরান একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান অতিরিক্ত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে ইসরায়েলের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত শেষ করার কৌশল নিয়েছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সফল, তবু কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।
সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ইরান সামরিক সক্ষমতায় ইসরায়েলের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইসরায়েল স্পষ্টভাবে আধুনিক। ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক সক্ষমতা ও গোয়েন্দা শক্তি তাদেরকে সরাসরি সংঘাতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। তবে ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন মজুত এবং আঞ্চলিক প্রক্সি বাহিনী দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, ইরান ও ইসরায়েল—দুই পক্ষই সামরিকভাবে শক্তিশালী। ইরান সংখ্যায় ও আঞ্চলিক কৌশলে এগিয়ে, আর ইসরায়েল আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষায় কিছুটা এগিয়ে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়বে, এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।
১০৮ বার পড়া হয়েছে