সর্বশেষ

মতামত

ইরানের টানা হামলায় চাপে ইসরায়েল: অস্ত্র ভাণ্ডার ফুরিয়ে আসছে, আকাশ প্রতিরক্ষায় সংকট

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫ ১২:০৪ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
ইরানের টানা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মুখে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন চরম চাপে। একসময় ‘অভেদ্য’ বলে পরিচিত ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা এখন আর আগের মতো নির্ভরযোগ্য নয়।

সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন একের পর এক ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানছে। এতে শুধু সামরিক নয়, রাজধানী তেলআবিবসহ আবাসিক এলাকাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষার মূল স্তম্ভ ‘আয়রন ডোম’ স্বল্প পাল্লার রকেট প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও, ইরান একযোগে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে এই ব্যবস্থা অকার্যকর করে তুলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান তাদের নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং, অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩-এর মতো উন্নত সিস্টেমগুলোকে বিভ্রান্ত করছে। একাধিক দিক থেকে একসঙ্গে হামলা হওয়ায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একসঙ্গে সব লক্ষ্যবস্তু ঠেকাতে পারছে না।

অস্ত্র ভাণ্ডারে সংকট
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বিশেষ করে দূর পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যবহৃত অ্যারো মিসাইলের মজুদ এখন সংকটাপন্ন। মার্কিন কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, ইসরায়েলের অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে তারা কয়েক মাস ধরে উদ্বিগ্ন। ইরানের টানা ছয়দিনের হামলায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ওভারলোডেড হয়ে পড়েছে। প্রতিটি শত্রু ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সাধারণত দুটি ইন্টারসেপ্টর ছোড়া হয়, ফলে মজুদ দ্রুত শেষ হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা ব্যয় ও কৌশলগত চাপ
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিচালন ব্যয়ও অত্যন্ত বেশি। প্রতিরাতে আকাশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ বিলিয়ন শেকেল (২৮৫ মিলিয়ন ডলার)। এই ব্যয় দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয় বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। ফলে, অস্ত্রের মজুদ সংকট ও উচ্চ ব্যয়ের কারণে ইসরায়েল এখন মিত্রদের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

মিত্রদের কূটনৈতিক চাপ ও আলোচনার উদ্যোগ
অস্ত্র সংকট ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চাপে পড়ে ইসরায়েল পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য—এরা ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েলের মিত্র হলেও, গাজা যুদ্ধ ও মানবিক ইস্যুতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। একইসঙ্গে, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক আলোচনার উদ্যোগও নিয়েছে এই দেশগুলো।

মিডিয়া ব্যবস্থাপনা ও বার্তা নিয়ন্ত্রণ
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ইসরায়েল সামরিক সেন্সরশিপ আরও কঠোর করেছে। গত দুইদিন সংবাদ প্রচার কার্যত বন্ধ ছিল। তবে, আজ আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে নির্দিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি মূলত আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও মিত্রদের সমর্থন আদায়ের কৌশল, যাতে অস্ত্র সংকট ও প্রতিরক্ষা দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরা যায়।

শেষ কথা
ইরানের টানা হামলায় ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অস্ত্র ভাণ্ডার এখন চরম চাপে। উচ্চ ব্যয়, অস্ত্র সংকট ও মিত্রদের কূটনৈতিক চাপ—সব মিলিয়ে ইসরায়েলকে এখন নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অস্ত্র সংকট কাটাতে ইসরায়েলকে মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সমন্বয় করতে হচ্ছে, যা তাদের ঐতিহাসিক কৌশলগত অবস্থানেও পরিবর্তন আনছে।


লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

১২১ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন