সর্বশেষ

মতামত

মার্কিন সিনেটের আপত্তি: ট্রাম্পের যুদ্ধনীতি প্রশ্নের মুখে

ট্রাম্পের ঘোষণা, খামেনির প্রতিজ্ঞা, কে জিতবে যুদ্ধ?

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫ ২:০১ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবির পাশাপাশি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর চার দশকের ‘ইরান পরমাণু হুমকি’ প্রচারণা—সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

ট্রাম্পের হুমকি ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া
মঙ্গলবার একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমরা জানি খামেনি কোথায় আছেন, তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু, তবে আপাতত নিরাপদ আছেন। আমরা এখনই তাকে হত্যা করব না”। ট্রাম্প আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের আকাশসীমা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি ইরানের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
খামেনিকে হত্যার ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে”—যা ইরানে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। খামেনি পাল্টা ভাষণে বলেন, “ইরানি জাতি কোনো চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো রূপ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে”। তিনি স্পষ্ট করেন, “ইরান কখনোই জায়নবাদীদের সঙ্গে আপস করবে না, কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না”।

ইসরায়েলের হুমকি ও নেতানিয়াহুর ‘পরমাণু প্রচারণা’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ প্রকাশ্যে বলেছেন, খামেনিকে হত্যাই ‘সংঘাতের সমাপ্তি’ ও ‘পরমাণু যুদ্ধ এড়ানোর’ উপায় হতে পারে। নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইরান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে এবং ইসরায়েলকে পরমাণু যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন থেকে অন্তত তিন বছর দূরে এবং ইসরায়েলের বহুদিনের ‘পরমাণু হুমকি’ প্রচারণা অতিরঞ্জিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোর্ডো ও নাতাঞ্জ কেন্দ্র ধ্বংস করা ইসরায়েলের পক্ষে একা সম্ভব নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব।

যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা ও মার্কিন সিনেটের আপত্তি
মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সদস্যরা প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরোধিতা করছেন। সিনেটর টিম কেইন ও বার্নি স্যান্ডার্সসহ অনেকেই কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া সামরিক পদক্ষেপ নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিয়েছেন। রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা থমাস ম্যাসিও বলেছেন, “এটা আমাদের যুদ্ধ নয়। যদি হয়, তবে সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের”।

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধের আঁচ
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চলছে। ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রে, জবাবে ইরান হাইফা, তেল আভিভ, জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বুধবার এক্স-এ ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ দেন এবং বলেন, “আমরা ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে কোনো দয়া দেখাব না”।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, ইরানের আত্মরক্ষা বৈধ এবং ইসরায়েলের হামলা ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংঘাত শুধু ইরান-ইসরায়েল সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে।

শেষ কথা
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পঞ্চম দিনে ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি, খামেনিকে হত্যার হুমকি, মার্কিন সিনেটের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান ও নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের ‘পরমাণু হুমকি’ প্রচারণা—সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এক অনিশ্চিত, বিপজ্জনক মোড়ে উপনীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন ওয়াশিংটন, তেহরান ও তেল আভিভের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট 

১১২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন