সমুদ্রের অতলে ‘জায়ান্ট ভাইরাস’ এর ভাণ্ডার আবিষ্কার, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫ ৯:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বিশ্বের গভীর মহাসাগরের জলে লুকিয়ে ছিল এমন এক রহস্য, যা উন্মোচনে হিমশিম খেত বিজ্ঞান। এবার সেই রহস্যের পর্দা ফাঁস করলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী বেনজামিন মিন্চ ও ভাইরোলজিস্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক অভিনব গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে ২৩০টিরও বেশি ‘জায়ান্ট ভাইরাস’, যাদের উপস্থিতি আগে কখনও শনাক্ত হয়নি।
এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা নেচার জার্নালের npj Viruses বিভাগে, ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল। গবেষণায় ব্যবহার করা হয় BEREN নামের এক উন্নত বায়োইনফরমেটিক প্রযুক্তি, যা বিশাল ভাইরাসের জিনোম শনাক্তে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। সাগরের পানি থেকে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণ করে এই প্রযুক্তির সাহায্যে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পান এই অজানা ভাইরাসসমূহের অস্তিত্ব।
এই বিশাল ভাইরাসরা মূলত প্রোটিস্ট নামের সামুদ্রিক অণুজীবদের সংক্রমণ করে যাদের মধ্যে রয়েছে শৈবাল, অ্যামিবা, ফ্ল্যাজেলেটস ইত্যাদি। এরা সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ভাইরাসগুলো এমন জিন বহন করে যা ফটোসিন্থেসিস ও কার্বন বিপাকের মতো প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় যা এতদিন কেবল জীবন্ত কোষে দেখা যেত।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই ভাইরাসগুলো ৫৩০টির বেশি নতুন প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম, যাদের মধ্যে ৯টি সরাসরি ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, সংক্রমণের সময় ভাইরাসগুলো তাদের হোস্ট অণুজীবের জীবনপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম।
গবেষণার সহ-নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, “এই ভাইরাসগুলো ক্ষুদ্র ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যারা সমুদ্রের কার্বন চক্র ও খাদ্যজালের ভিত্তি। এসব ভাইরাসকে বুঝতে পারলে ক্ষতিকর শৈবাল বৃদ্ধির (harmful algal bloom) পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণে নতুন দিক উন্মোচিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বায়োটেকনোলজির ক্ষেত্রেও এসব ভাইরাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, কারণ এদের মধ্যে এমন এনজাইম থাকতে পারে যা চিকিৎসা, কৃষি বা শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।”
গবেষণায় ব্যবহৃত হয় মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রস্ট ইনস্টিটিউট ফর ডেটা সায়েন্স অ্যান্ড কম্পিউটিং-এর (IDSC) ‘পেগাসাস’ নামের সুপারকম্পিউটার। এর মাধ্যমে গিগাবাইটেরও বেশি পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা শত শত অজানা ভাইরাসের জেনোম পুনর্গঠন করেন।
গবেষণাপ্রধান বেনজামিন মিন্চ বলেন, “এই বিশাল ভাইরাসগুলো শুধু অণুজীবের ভেতর ঢুকে পড়েই ক্ষান্ত হয় না, বরং তাদের জিনগত কাঠামো ও বিপাকীয় কার্যক্রমকেও প্রভাবিত করে। এর মাধ্যমে তারা সমুদ্রের জীবরসায়নে একটি সুক্ষ্ম অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
এই আবিষ্কার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শুধু ভাইরাসের জগতে নয়, মহাসাগরের গভীরে লুকিয়ে থাকা আরও অনেক অজানা রহস্য উন্মোচনের পথ খুলে দিল এই গবেষণা।
১১৩ বার পড়া হয়েছে